ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নিরাপদ শহরের তালিকায় রয়েছে কোপেনহেগেন, টরন্টো, সিঙ্গাপুর, সিডনি এবং টোকিও।
করোনা পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে পুরো পৃথিবীর চিত্র। দেশে-দেশে বন্ধ হয়ে যায় অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব রকম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। জারি করা হয় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বিশ্ব।
সম্প্রতি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নিরাপদ শহরের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। করোনা পরবর্তী ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন, কানাডার সবচেয়ে বড় শহর টরন্টো, এশিয়ার বাণিজ্যিক নগরী সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এবং জাপানের রাজধানী টোকিও।
কোপেনহেগেন-
নিরাপদ শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন। তালিকার শীর্ষে থাকার পিছনে রয়েছে এর পরিবেশগত নিরাপত্তা, বিশুদ্ধ বায়ু, পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং শহর কেন্দ্রীক বনায়ন। এছাড়া, এই শহরের বাসিন্দাদের করোনা পরিস্থিতিতে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়া। করোনা অতিমারীতেও শহরটিতে মানুষ সামাজিক বিধি মেনে চলা ফেরা করেছে। মেনে চলেছে সামাজিক দূরত্ব।
এই শহরের মানুষের মধ্যে সামাজিক দায়িত্বশীলতা শহরটিকে মহামারির করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করেছে তেমনি বিশ্বের নিরাপদ শহরের তালিকার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে।
নিরাপদ শহরের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে শুধু পরিবেশ নয়, সেখান রাজনৈতিক প্রভাবও বিবেচনা করা হয়। শহরটি দুর্নীতি এবং অপরাধ মুক্ত বলে তালিকার শীর্ষে রয়েছে। কোপেনহেগেনে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটকদের জন্যও রয়েছে বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা।
টরোন্টো-
নিরাপদ শহরের তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কানাডার সবচেয়ে বড় শহর টরোন্টো। শহরের বাসিন্দাদের সামাজিক মূল্যবোধ এবং করোনার টিকা নেয়ার সচেতনতা এবং সংস্কৃতি শহরটিকে নিরাপদ শহরের তালিতায় স্থান দিয়েছে।
এখানকার বাসিন্দারা নিজেদের নিরাপদ মনে করার অন্যতম কারণ এর বহুজাতীয়তাবাদের দীর্ঘ ইতিহাস। এখানে রয়েছে বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠী এবং ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। এখানকার বাসিন্দারা খোলা মনের হওয়ায় আপনি এখানে নিজেকে খুবই নিরাপদ মনে করবেন।
সিঙ্গাপুর-
ডিজিটাল নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং অবকাঠামোগত নিরাপত্তার কারণে করোনা অতিমারীতেও খুব অল্প সময়ে ঘুরে দাড়িয়েঁছে এশিয়ার বাণিজ্যিক নগরী সিঙ্গাপুর। দেশটিতে রয়েছে বিশ্বের করোনার টিকা দেয়া সর্বোচ্চ হার। প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে।
এছাড়া করোনার নতুন ধরন মোকাবেলায় নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। এমনকি ভ্রমণকারীদেরকেও নিজেদের স্মার্ট ফোনে করোনা ট্রেসিং অ্যাপস ব্যবহার করতে হয়। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখানকার অফিস-আদালতের কার্যক্রম বেশিরভাগই বাড়িতে বসে করা যায়।
এতে সামাজিক মেলেমেশা অনেক কমে গেছে। এছাড়া, শপিং মল এবং পর্যটন এলাকাগুলোতে সীমিত মানুষের প্রবেশাধিকার দেয়া হয়। এমনকি যেসব জায়গায় লোক সমাগম বেশি তা স্পেস আউট টুলের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
সিডনি-
অস্ট্রেলিয়া নিরাপদ শহরের তালিকায় পঞ্চম এবং শীর্ষ ১০টি নিরাপদ স্বাস্থ্য সুরক্ষা শহরের একটি। অস্ট্রেলিয়া অন্যতম দেশ যারা করোনার প্রাথমিক পর্যায়ে সংক্রমণ প্রতিরোধে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। জারি করা হয় কঠোর লকডাউন।
বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর তালিকায় সবচেয়ে কম মানুষের মৃত্যু হয়েছে অস্ট্রেরিয়ায়। নিউ সাউথ ওয়েলসে ৭০ শতাংশ মানুষকে দেয়া হয়েছে করোনার টিকা। আগামী নভেম্বর থেকেই করোনার সব বিধিনিষেধ তুলে নিবে দেশটি।
টোকিও-
স্বাস্থ্য সুরক্ষা, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সেবা, অতিমারী প্রস্তুতি, জীবনরক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং করোনায় মৃত্যুর হিসেবে নিরাপদ শহরের শীর্ষে রয়েছে জাপানের রাজধানী টোকিও। যদিও অলিম্পিকের কারণে করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। তবে ৬০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনায় করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।
সেপ্টেম্বর থেকে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা এবং করোনার বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাপান। এছাড়া, স্বাস্থ্য সুরক্ষা জনসমাগম এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড উৎসাহিত করতে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট প্রবর্তন করতে যাচ্ছে দেশটি। যারা ভ্যাকসিন পাসপোর্ট গ্রহণ করবেন তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট বা ছাড় পাবেন। পাবেন অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও।