বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’ ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের (Intangible Cultural Heritage) স্বীকৃতি অর্জন করেছে। মঙ্গলবার (৯ই ডিসেম্বর) ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো ২০০৩ কনভেনশনের ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদের সভাপতি এবং বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা এই অর্জনকে বাংলাদেশের জন্য ‘অসামান্য গৌরব’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের শিল্পকর্ম যে বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেল, তা দেশের সকল তাঁতি ও নারীর সম্মানের প্রতিফলন। তিনি এই অর্জন দেশের তাঁতি সমাজ ও নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাস ইউনেস্কো সদরদপ্তরে টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্পকে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। কারিগরি দিক থেকে জটিল হলেও বাংলাদেশ দূতাবাস নিজস্ব দক্ষতায় নথিটি প্রস্তুত করে। বিভিন্ন ধাপে মূল্যায়নের পর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদ বাংলাদেশের জমা দেওয়া নথিকে উচ্চমানসম্পন্ন হিসেবে গ্রহণ করে।
সাম্প্রতিক সময়ে টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। ২০২৩ সালে ভারত টাঙ্গাইল শাড়িকে তাদের জিআই পণ্য ঘোষণা করলে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তবে গবেষক ও পেশাজীবীদের মতে, ইউনেস্কোর এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ফলে সৃষ্ট জটিলতার অনেকটাই নিরসন হয়েছে এবং এই শিল্পের ওপর বাংলাদেশের স্বত্ব আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হলো।
ভারতে অনুষ্ঠিত সভায় এই স্বীকৃতি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক কনভেনশনের অধীনে নিবন্ধন হওয়ায় এর বৈধতা প্রশ্নাতীত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের নারীদের কাছেই শাড়ি জনপ্রিয়। তাই এই স্বীকৃতি শাড়িপ্রেমী নারীদের তাদের প্রিয় পোশাক নিয়ে নতুনভাবে গর্ব করার সুযোগ করে দেবে।
উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশের বাউল গান (২০০৮), জামদানি বুনন শিল্প (২০১৩), মঙ্গল শোভাযাত্রা (২০১৬), শীতলপাটি বুনন শিল্প (২০১৭) এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে ‘ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র’ ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশ ২০২২ সালে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে চার বছরের জন্য এই পর্ষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নতুন গতি পেয়েছে। গত ৭ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর পর্ষদের ২০তম সভার উদ্বোধন করেন, যা আগামী ১৩ ডিসেম্বর শেষ হবে।
ডিবিসি/পিআরএএন