আজ ১৯শে জুলাই, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী লেখক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ-এর ত্রয়োদশ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের এই দিনে ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে নিউইয়র্কের বেলেভু হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন এক বিরল প্রতিভার অধিকারী, যিনি তার লেখনীর মাধ্যমে আপামর বাঙালির হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন। তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো, যেমন হিমু, মিসির আলি, এবং শুভ্র, বাংলা সাহিত্যের আইকনিক চরিত্রে পরিণত হয়েছে। তিনি ছিলেন এমন একজন লেখক, যিনি একইসাথে শহুরে শিক্ষিত পাঠক এবং গ্রামীণ সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন। তার সহজ-সরল কিন্তু গভীর জীবনবোধসম্পন্ন লেখাগুলো পাঠককে হাসিয়েছে, কাঁদিয়েছে এবং ভাবিয়েছে।
১৯৪৮ সালে নেত্রকোণায় জন্মগ্রহণ করা হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন। তবে শিক্ষকতার চেয়েও বেশি পরিচিতি লাভ করেন একজন লেখক হিসেবে। তার প্রথম উপন্যাস 'নন্দিত নরকে' ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় এবং এটি তাকে দ্রুত খ্যাতি এনে দেয়। এরপর একে একে তিনি উপহার দিয়েছেন 'শঙ্খনীল কারাগার', 'জোছনা ও জননীর গল্প', 'মধ্যাহ্ন', 'বাদশা নামদার'-এর মতো কালজয়ী উপন্যাস। তার উপন্যাসের সংখ্যা দুই শতাধিক।
সাহিত্যের পাশাপাশি নাটক ও চলচ্চিত্র জগতেও তার অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। তার নির্মিত টেলিভিশন ধারাবাহিক 'কোথাও কেউ নেই', 'আজ রবিবার', 'বহুব্রীহি' ছিল তুমুল জনপ্রিয়। চলচ্চিত্রেও তিনি রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। তার পরিচালিত 'আগুনের পরশমণি', 'শ্রাবণ মেঘের দিন', 'দুই দুয়ারী', 'শ্যামল ছায়া', এবং সর্বশেষ 'ঘেটুপুত্র কমলা' দর্শক ও সমালোচক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।
হুমায়ূন আহমেদ শারীরিকভাবে না থাকলেও তার সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন বাংলা ভাষাভাষী মানুষের হৃদয়ে।
ডিবিসি/এমইউএ