যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে আফগান তালেবান বাহিনীর হামলার কড়া জবাব দিয়েছে পাকিস্তান। চমন সীমান্তে আফগান তালেবান সরকারের তিনটি পোস্ট ধ্বংস করেছে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী। শুক্রবার (৫ই ডিসেম্বর) ও শনিবারের (৬ই ডিসেম্বর) এই পাল্টা হামলায় অন্তত ২৩ জন আফগান সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান।
রবিবার (৭ই ডিসেম্বর) জিও নিউজ সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, মধ্যরাতে তালেবান সেনারা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে এবং বেলুচিস্তানের চমন সেক্টরে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে বিনা উসকানিতে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চালানো এই হামলার জবাবে পাকিস্তান বাহিনী প্রথমে লক্ষ্যস্থির করে ছোট অস্ত্র দিয়ে পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে এই গোলাগুলি চলে।
তালেবান সেনাদের থামাতে এবং পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সেজন্য পাকিস্তান নিরাপত্তা বাহিনী রকেট লঞ্চার, মর্টার এবং সরাসরি ফায়ারিং অস্ত্রসহ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। এতে তালেবানের তিনটি পোস্ট সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। সূত্র জানায়, নির্দোষ আফগান জনগণের ক্ষতি এড়াতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে।
আফগান সেনারা তাদের পোস্ট ছেড়ে পালিয়ে বেসামরিক এলাকা ব্যবহার করে পুনরায় গুলি চালালে পাকিস্তান ‘আর্মড সোয়ার্ম ড্রোন’সহ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে জবাব দেয়। এতে দুই ডজনেরও বেশি আফগান তালেবান সেনার মৃত্যু নিশ্চিত হয় এবং অনেকে আহত হন।
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে তালেবান বাহিনী সাদা পতাকা উড়ায় এবং যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী নজরদারির মধ্যে তাদের মৃতদেহ ও আহতদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর অনুমতি দেয়। ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক মূল্যায়নে অন্তত ২৩ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের বিদেশি গণমাধ্যম বিষয়ক মুখপাত্র মোশাররফ জায়েদি বলেন, আফগান বাহিনী চমন সীমান্তে ‘বিনা উসকানিতে গুলি’ চালিয়েছে। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পাকিস্তান তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরোপুরি সতর্ক ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
অন্যদিকে, আফগান তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ অভিযোগ করেছেন যে, পাকিস্তানি বাহিনী কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলদাক জেলায় হামলা চালিয়েছে। তার ডেপুটি হামদুল্লাহ ফিতরা রয়টার্সকে জানান, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে একজন তালেবান সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
এর আগে গত ১২ই অক্টোবর আফগান তালেবান ও তাদের সহযোগী জঙ্গিরা পাকিস্তানের একাধিক পোস্টে হামলা চালানোর পর পাকিস্তান তোরখাম ও চমন সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। ১১ ও ১২ই অক্টোবরের ওই সীমান্ত সংঘর্ষে ২০০ এর বেশি তালেবান নিহত হয়েছিলেন এবং পাকিস্তানের ২৩ জন সেনা শহীদ হয়েছিলেন।
সে সময় পাকিস্তান কান্দাহার ও কাবুলে সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে অভিযান চালায়। পরবর্তীতে কাতারের দোহা এবং তুরস্কে মধ্যস্থতায় ১৯শে অক্টোবর দুই পক্ষের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদ অবিলম্বে বন্ধ করার এবং দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল।
ডিবিসি/এনএসএফ