মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণী কি তার সঙ্গীর জীবন বাঁচাতে অঙ্গ কেটে ফেলার মতো জটিল ও পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে? এতদিন উত্তর ‘না’ হলেও, বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, হ্যাঁ, পারে! সম্প্রতি ফ্লোরিডা কার্পেন্টার (Florida carpenter) প্রজাতির পিঁপড়ের মধ্যে এই অবিশ্বাস্য আচরণ লক্ষ্য করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা প্রাণীজগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
‘কারেন্ট বায়োলজি’ নামক এক বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, এই পিঁপড়েরা তাদের দলের কোনো সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হলে, তার জীবন বাঁচাতে রীতিমতো অঙ্গচ্ছেদ (Amputation) করে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আঘাতের তীব্রতা এবং সংক্রমণের ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করে পিঁপড়েরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, আহত পা-টি পরিষ্কার করবে নাকি পুরোপুরি কেটে ফেলবে।
গবেষণার প্রধান লেখক, জার্মানির ভ্যুর্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী এরিক ফ্রাঙ্ক জানান, "প্রাণীজগতে এটিই একমাত্র উদাহরণ যেখানে একটি প্রজাতির সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে অন্য সদস্যের অঙ্গচ্ছেদ করে থাকে।"
গবেষণায় দেখা গেছে, পিঁপড়েরা একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। যদি পায়ের ফিমার (ঊরুর হাড়) অংশে আঘাত লাগে, যেখানে মাংসপেশী বেশি এবং সংক্রমণের ঝুঁকিও মারাত্মক, তাহলে তারা পা-টি কেটে ফেলে। এর ফলে আহত পিঁপড়ের বাঁচার হার দাঁড়ায় প্রায় ৯৫%।
অন্যদিকে, টিবিয়া (হাঁটুর নিচের অংশ) অংশে আঘাত লাগলে, যেখানে মাংসপেশী কম, তারা শুধু মুখ দিয়ে পরিষ্কার করে। এক্ষেত্রেও বাঁচার হার থাকে প্রায় ৭৫%। কোনো চিকিৎসা না পাওয়া পিঁপড়েদের তুলনায় এই হার অনেক বেশি।
মজার বিষয় হলো, অন্য এক প্রজাতির পিঁপড়ে (Megaponera analis) তাদের লালার বিশেষ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত জীবাণুনাশক পদার্থ দিয়ে ক্ষতের চিকিৎসা করে। কিন্তু ফ্লোরিডা কার্পেন্টার পিঁপড়েদের সেই গ্রন্থি না থাকায় তারা সম্পূর্ণ যান্ত্রিক পদ্ধতিতেই (মুখ দিয়ে পরিষ্কার ও কর্তন) এই জীবনরক্ষাকারী কাজটি সম্পন্ন করে।
তথ্যসূত্র আর্থ.কম।
ডিবিসি/এমইউএ