বাংলাদেশ, জেলার সংবাদ, অপরাধ

স্ত্রীর পর মেয়েকেও যৌন হয়রানি, বরিশাল থেকে কুমিল্লায় এনে যুবককে খুন

কুমিল্লা প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ১৭ই জুলাই ২০২৫ ০৯:৩০:০৭ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় সড়কের পাশে গাছতলায় পাওয়া যুবকের গলাকাটা মরদেহের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া এবং পরবর্তীতে সেই সূত্র ধরে মেয়ের সঙ্গে অবমাননাকর ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই ইমতিয়াজ নামের ওই যুবককে বরিশাল থেকে ফুসলিয়ে কুমিল্লায় এনে শ্বাসরোধের পর গলা কেটে হত্যা করা হয়।

 

নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—বরিশালের কাজীরহাট থানার ছৈয়দক্তা এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলাম মোল্লার ছেলে মো. সোহেল ইসলাম (৪০), তার ছেলে শাহীন ইসলাম (১৯) এবং সোহেলের মামা, মেহেন্দিগঞ্জ থানার হেসামউদ্দিন এলাকার মৃত জালাল হাওলাদারের ছেলে হানিফ হাওলাদার (৬১)।

 

বৃহস্পতিবার (১৭ই জুলাই) বিকেলে কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম।

 

পুলিশ সুপার জানান, গত ১২ জুলাই কুমিল্লার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গুলবাগ এলাকায় সড়কের পাশে একটি গাছের নিচে গলাকাটা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। নিহত যুবক ইমতিয়াজ ওরফে মান্না (২২) বরিশালের কাজীরহাট থানার পূর্ব রতনপুর এলাকার দুলাল হাওলাদারের ছেলে বলে শনাক্ত করা হয়।

 

ঘটনার ছায়াতদন্ত শুরু করে পিবিআই। পরদিন ১৩ জুলাই নিহতের বাবা দুলাল হাওলাদার বাদী হয়ে তিতাস থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কুমিল্লা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আবু বকর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এরপর ১৫ জুলাই গভীর রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীচর থেকে মূল পরিকল্পনাকারী সোহেল ও তার ছেলে শাহীনকে এবং তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১৬ জুলাই রাজাবাজার এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে সহায়তাকারী আবু হানিফ হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যার পেছনের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। মূল অভিযুক্ত সোহেল তার স্ত্রীকে বরিশালের গ্রামের বাড়িতে রেখে ছেলে শাহীনকে নিয়ে ঢাকায় গাড়ি চালাতেন। বাড়ি ফিরে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে নিহত ইমতিয়াজের পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। এরপর তিনি স্ত্রীকে ঢাকায় নিয়ে এলেও তার মাদ্রাসাপড়ুয়া ১৫ বছর বয়সী মেয়েকে দাদির কাছে বরিশালে রেখে আসেন।

 

অভিযোগ অনুযায়ী, এই সুযোগে ইমতিয়াজ তার মায়ের সঙ্গে তোলা বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে সোহেলের মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করে এবং তার সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করে। এই ঘটনাটিও সোহেলের কানে পৌঁছালে তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ছেলে ও মামার সঙ্গে মিলে ইমতিয়াজকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

 

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার দিন আসামিরা একটি লাল মাইক্রোবাসে করে ইমতিয়াজকে সিলেটে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখায়। ইমতিয়াজও তাদের সঙ্গে রওনা হন। কিন্তু মাইক্রোবাসটি সিলেটে না গিয়ে কুমিল্লার তিতাসের জিয়ারকান্দি এলাকায় নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গাড়ির ভেতরেই তিনজন মিলে ইমতিয়াজকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরবর্তীতে মৃত্যু নিশ্চিত করতে গাড়ি থেকে নামিয়ে মরদেহটি রাস্তার পাশে ফেলে গলা কেটে দেন এবং ছুরিটি লাশের পাশেই ফেলে পালিয়ে যান।

 

পুলিশ সুপার আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত তিন আসামিকেই বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে এবং এর সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।

ডিবিসি/এমএআর

আরও পড়ুন