আন্তর্জাতিক, এশিয়া, আরব

ইয়েমেন ইস্যুতে ইরানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ সৌদির

মো. হামিদুর রহমান

ডিবিসি নিউজ

শনিবার ৫ই অক্টোবর ২০১৯ ০৫:০৬:৫৮ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

সৌদি আরবের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী খালেদ বিন সালমান ইরান বিরোধী ভিত্তিহীন অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে দাবি করেছেন, রিয়াদ ইয়েমেনের রাজনৈতিক উচ্চ পরিষদের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাবে। ইয়েমেনের এই বিপ্লবী পরিষদ গত ২০ সেপ্টেম্বর সৌদি হামলা বন্ধের শর্ত দিয়ে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়।

ইরানও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেয়ার জন্য সৌদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ইয়েমেনি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধের যেকোনো পদক্ষেপকে ইরান স্বাগত জানাবে এবং তেহরান এটিকে ওই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করে। কিন্তু ইয়েমেন বিরোধী যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সৌদি আরবের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী খালেদ বিন সালমান দাবি করেছেন, ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির পক্ষে ইরান সুন্দর সুন্দর বক্তব্য দিয়ে এবং এ বক্তব্যের সঙ্গে চলমান সংকট থেকে বের হবার বিষয়টিকে সম্পর্কযুক্ত করে তেহরান আসলে ইয়েমেনের জনগণকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছে। সৌদি উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো দাবি করেন, ইরান ইয়েমেন পরিস্থিতিকে নিজের স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।

সৌদি সরকার এমন সময় ইয়েমেন ইস্যুতে ইরানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মনগড়া কথাবার্তা বলছে যখন এটা সবারই জানা আছে যে, ইয়েমেনের বর্তমান হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানবেতর পরিস্থিতির জন্য সৌদি আগ্রাসন দায়ী। প্যারিস থেকে প্রকাশিত দৈনিক লা ফিগারো এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে লিখেছে, ইয়েমেন যুদ্ধে পরাজয় সৌদি সরকারের জন্য বিরাট বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক।

আমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আরো কয়েকটি দেশের সহযোগিতায় সৌদি আরব ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসন চালানোর পাশাপাশি দরিদ্র এ দেশটিকে স্থল, সমুদ্র ও আকাশ পথে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সে সময় বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তিনিই সৌদি আরবকে ইয়েমেন সংঘাতে লিপ্ত করেন। সৌদি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৩০ লাখ ইয়েনেনি গৃহহারা হয়েছে এবং এক কোটি ১০ লাখ মানুষ চরম দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে আগ্রাসন চালিয়ে সৌদি আরবের কতটুকু লাভ হয়েছে সেটাই এখন প্রশ্ন।

সৌদি আরব ও তার মিত্রদের আগ্রাসনের ফলে এ পর্যন্ত ইয়েমেনে ১৬ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরো বহু সংখ্যক মানুষ। সৌদি আগ্রাসন আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ইরানের বিরুদ্ধে তারা যে অভিযোগ করেছে তা অতীত নীতিরই অনুসরণ এবং তা অপরিপক্কতার প্রমাণ। তারা এখনো বাস্তবতা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইরান বিরোধী বক্তব্য দিয়ে ইয়েমেন যুদ্ধে তারা আসলে নিজেদের ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। মধ্যপ্রাচ্যের খ্যাতনামা সাংবাদিক আব্দুল বারি আতাওয়ান বলেছেন, ইয়েমেনিরা বর্তমানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন শক্তিতে বলিয়ান। যুদ্ধের পঞ্চম বছরে এসে ইয়েমেনিরা যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইয়েমেনের চোরাবালি থেকে সৌদি আরবের উদ্ধারের একমাত্র পথ হচ্ছে, বাস্তবতা মেনে নিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করা। একমাত্র এভাবেই ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তাদের মতে ইরানের বিরুদ্ধে অযথা অভিযোগ করে কোনা লাভ হবে না। 

আরও পড়ুন