জাতীয়

'করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই'

শামীম আহমেদ

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ১৩ই এপ্রিল ২০২১ ০৮:১১:৪৬ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

প্রাণঘাতী করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সরকার সবসময় জনগণের পাশে রয়েছে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এমন অভয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই শুরু হচ্ছে নতুন বাংলা বছর ১৪২৮ সাল। এ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সকলকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছাও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ-বিদেশে যে যেখানেই আছেন সবাইকে জানাই ১৪২৮ বঙ্গাব্দের আন্তরিক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ। পহেলা বৈশাখ এখন বাঙালি সংস্কৃতির শক্তিশালী ধারক-বাহক। গত বছরের মত এ বছরও আমরা বাইরে কোন অনুষ্ঠান করতে পারছিনা। কারণ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নতুন করে আঘাত হেনেছে সারা দেশে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের করোনাভাইরাস আরও মরণঘাতী হয়ে আভির্ভূত হয়েছে। পয়লা বৈশাখের আনন্দ তাই গত বছরের মত এবারও ঘরে বসেই উপভোগ করবো আমরা। টেলিভিশন চ্যানেলসহ নানা ডিজিটাল মাধ্যমে অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হবে। সে সব অনুষ্ঠান উপভোগ ছাড়াও আমরা নিজেরাও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে আনন্দ উপভোগ করতে পারি।

তিনি আরো বলেন, একইসঙ্গে শুরু হয়েছে মুসলমানদের পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। আমি সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে পবিত্র মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেই আমরা এক বছরের অধিক সময় পার করলাম। গত বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহের দিকে আমাদের দেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। নানা আশঙ্কা আর আতঙ্ক গ্রাস করেছিলো আমাদের। সেসব মোকাবিলা করেই আমাদের টিকে থাকতে হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, কোনভাবেই সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। জনস্থাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তাই আমাদের আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশের অর্থনীতি, জীবন-জীবিকা যাতে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে না পড়ে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখছে সরকার। পথ যত কঠিনই হোক না কেন তা জয় করেই সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। লকডাউনে অনেকেরই জীবন জীবিকায় অসুবিধা হবে। তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে মানুষের জীবন সবার আগে। বেঁচে থাকলে আবার সবকিছু গুছিয়ে নেওয়া যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, গত বছর আমরা একটানা ৬২ দিন সাধারণ ছুটি বলবৎ করেছিলাম। আমরা এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে পারিনি। বিদেশের সঙ্গে চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এই অবস্থা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের যেখানেই এই মরণঘাতী ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে, সেখানেই এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর আমি দরিদ্র-নিম্নবিত্ত মানুষদের সহায়তার জন্য কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে পল্লী অঞ্চলে কর্মসৃজনের জন্য ৮০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং পবিত্র রমজান ও আসছে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৬৭২ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। এর দ্বারা দেশের প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪২ হাজার নিম্নবিত্ত পরিবার উপকৃত হবেন। গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে ভিজিএফ, টেস্ট রিলিফসহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। 

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ার পর থেকে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যেই বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার  করেছেন। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। আমাদের সৌভাগ্য টিকা উৎপাদনের শুরুতেই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকার ডোজ আমরা নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। ইতোমধ্যেই ৫৬ লাখের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। যারা প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সকলকে টিকার আওতায় নিয়ে আসবো। আমাদের সে প্রস্তুতি রয়েছে। তবে টিকা দিলেই একজন সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত হবেন এমন নিশ্চয়তা নেই বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। কাজেই টিকা নেওয়ার পরও আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

করোনা মোকাবিলায় সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার ইতোমধ্যে ১৮-দফা নির্দেশনা জারি করেছে। আমরা যদি সকলে করোনাভাইরাস মোকাবিলার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, অবশ্যই এই মহামারিকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।

আরও পড়ুন