জেলার সংবাদ

বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, রেড এলার্ট জারি

শামীম আহমেদ

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ২০শে অক্টোবর ২০২১ ০২:৪৬:১২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ভারত থেকে আসা পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারেজের সবকটি জলকপাট খুলে দেয়ায় লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে বইছে তিস্তার পানি। দুই জেলাতেই ধসে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অনেক অংশ। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চলসহ অন্তত ২০টি গ্রাম। মানুষজনকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করে রেড এলার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

উজানের ভারি বৃষ্টিতে ভারতের গজল ডোবা বাঁধের সবকটি জলকপাট খুলে দেয়ায় লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক ওপরে। এর ফলে বুধবার (২০ অক্টোবর) সকালে পানি বিপৎসীমার ৫৩ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে।

পানির চাপে হাতীবান্ধার বড়খাতা হতে গড্ডিমারী মেডিক্যাল মোড় হয়ে হাতীবান্ধা মেডিক্যাল মোড় বাইপাস পাকা সড়কটির ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যায়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পাশে ফ্লাড বাইপাস পানির চাপে ভেঙে যায়। এতে নিলফামারী জেলার সাথে লালমনিরহাটের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে। ওই বাইপাসটি ভেঙে যাওয়ায় পানি হাতীবান্ধা শহরে ঢুকে পড়ে।

হঠাৎ পানির তীব্র স্রোতে ভেসে যায় নদীর পাড়ের অনেক ঘরবাড়ি। প্লাবিত হয়েছে অনন্ত ২০টি গ্রাম। তিস্তার পানিতে তিস্তা তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার একর পাকা ধানক্ষেতসহ আলু, ভুট্টাক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। দুর্ভোগে পড়েন ভাটি এলাকার মানুষ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

দুর্ভোগের শিকার স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ক্ষেত-খামার সব ভেসে যাচ্ছে। আমার ৫ বিঘা জমির আলু ভেসে গেছে।

আরো এক খামারি বলেন, আমাদের খামার বাঁচান। আমাদের কৃষকদের বাঁচান। আমাদের সবকিছু ভেসে যাচ্ছে।

এদিকে আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে ধসে গেছে দোয়ানী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাইপাসের প্রায় সাড়ে ৩শ' মিটার অংশ। এতে চার উপজেলার ৮ ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নৌকার সংকটে ব্যহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ।

এক নারী বলেন, চরাঞ্চলে আমাদের লোকজন রয়েছে তাদের উদ্ধারে পর্যাপ্ত নৌকা নেই।

উদ্ধার কাজে নিয়োজিত এক ব্যক্তি বলেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি লোকজন, শিশু ও গবাদিপশুদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসতে।

পানির চাপ কমাতে খুলে দেয়া হয়েছে ব্যারেজের সবকটি গেট। তবে আরো কয়েক ঘণ্টা এই পরিস্থিতি থাকবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, 'পানি বাড়ার কারণ হলো অল্প সময়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে ভারতের অংশে। এবং সে পানিগুলোই নেমে আসছে। ফ্লাড বাইপাস ওপেন হয়ে গেছে। এ মুহূর্তে সব গেটই খোলা। ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যেই পানি কমে যাবে আশা করা যায়।'

অন্যদিকে নীলফামারীতেও একই চিত্র। ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর তিস্তার পানি। এতে অনেক নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।

ব্যারেজ এলাকায় রেড অ্যালার্ড জারি করা হয়েছে। আর পানির তোড়ে ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাইপাসসহ ৪টি বাঁধ।

দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের দুঃখ লাঘবে দ্রুত পুর্নবাসন ও সরকারি সহায়তার পাশাপাশি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি তিস্তাপাড়ের মানুষের।

উল্লেখ্য, ভারতের উত্তরাখাণ্ড রাজ্যে ভারি বৃষ্টিপাত ও বন্যায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত পাঁচজন। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। রাজ্যজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়িঘর, সেতু ও রাস্তাঘাট। ভূমিধসে রাস্তা আটকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাজ্যের নৈনিতাল, কালাঢুঙ্গি, হলদিবানি, ভবালিসহ আরো অনেক এলাকা।

আরও পড়ুন