জেলার সংবাদ, কৃষি

বিষমুক্ত সবজি চাষে ব্যবহার হচ্ছে জৈব বালাইনাশক

মো. লুৎফর রহমান, পঞ্চগড় প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ১৩ই মার্চ ২০২০ ০১:৫৬:৫৪ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

পঞ্চগড়ের কয়েকটি গ্রামে বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু হয়েছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত শাক-সবজি চাষ করতে চাষীরা ব্যবহার করছেন জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক।

চারদিকে যখন ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ছড়াছড়ি ঠিক সেই সময়ে আশার আলো জুগিয়েছে পঞ্চগড়ের কয়েকটি গ্রামে বিষমুক্ত সবজি চাষ। পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়নের ঘটবর, পঞ্চগড় ইউনিয়নের ভাবরঙ্গী ও শিংপাড়া, হাড়িভাসা ইউনিয়নের পাইকানী ও হাফিজাবাদ ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামে এখন কৃষকরা বিষমুক্ত শাক সবজি চাষ করছেন। এই বিষমুক্ত সবজি চাষ করতে তারা রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বদলে জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করছেন। এখন বিষমুক্ত এই সবজি গ্রামগুলোতে গেলেই দেখা মিলবে ক্ষেতে ঝুলছে নানা ধরণের জৈব বালাইনাশক। মিষ্টি কুমড়া, লাউ, শসা, পটল, পেঁয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ বিভিন্ন শাক সবজি ক্ষেতে বাঁশের খুঁটিতে বাঁধা এইসব জৈব বালাইনাশক শোভা পাচ্ছে। শাক সবজির ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমন করতে সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ, কালার ট্র্যাপ ও আকর্ষণ ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি কাকতারুয়াও বসিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে পোকা দমনে কেবল সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ও আকর্ষণ ফাঁদ ব্যবহার করা হলেও নতুন করে যুক্ত হয়েছে কালার ট্র্যাপ।

পুরনো প্লাস্টিকের জারে হলুদ রং করে তাতে মোবিল মাখিয়ে ক্ষেতের মধ্যে খানিক উঁচুতে ঝুলিয়ে রাখছেন তারা। এতে জাব পোকা, সাদা মাছি, থ্রিপিসসহ শোষক পোকা হলুদ রঙে আকৃষ্ট হয়ে মোবিলে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচে এই জৈব বালাইনাশক তৈরি করা যায়। জৈব বালাইনাশক প্রয়োগে কীটনাশক ছাড়াই খুব অল্প খরচে পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে পারছেন চাষীরা। কৃষি কর্মকর্তারাও চাষীদের বিষমুক্ত সবজি চাষে পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন।

এই পদ্ধতিতে শাক সবজি চাষাবাদে উৎপাদন খরচ অর্ধেকে নেমে আসছে। সেই সঙ্গে বাজারে বিষমুক্ত সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় দাম ভাল পাচ্ছেন চাষীরা। এমনকি চাষীদের শাক সবজি বিক্রি নিয়ে কোন বিড়ম্বনা পোহাতে হয় না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্ধারিত বিষমুক্ত সবজির দোকানের মাধ্যমে এই সকল সবজি বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে রাসায়নিকে উৎপাদিত সবজির তুলনায় বিষমুক্ত সবজি বিক্রি হচ্ছে এক-দুই টাকা বেশিতে। বিষমুক্ত সবজি ভাল দামে বিক্রি করে চাষীরা যেমন খুশি তেমনি ক্রেতারাও পাচ্ছেন বিষমুক্ত সবজির স্বাদ।

পঞ্চগড় ঘটবর এলাকার চাষী রাজু আহম্মেদ বলেন, 'আমরা আমাদের গ্রামে একটি কৃষক সমবায় সমিতি করেছি। এই সমিতির প্রত্যেক সদস্যই বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদ করছে। বাজারে আমাদের সবজির চাহিদা বেশি। তাই বিক্রি করতে কোন সমস্যা হয় না। ভালো দামও পাওয়া যায়।'

ওই গ্রামের কৃষক ফজলুল হক বলেন, বিষমুক্ত সবজি চাষ করতে আমরা মূলত জৈব সার ও বিভিন্ন জৈব বালাইনাশক যেমন ফেরোমন ট্র্যাপ, আকর্ষণ ট্র্যাপ ও কালার ট্র্যাপ ব্যবহার করছি। এসব ব্যবহার করেই পোকা দমন করা যাচ্ছে। তাই কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। বাজারে এখন সার ও কীটনাশকের দাম অনেক। তাই আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক কমে আসছে। সেই সঙ্গে বিষমুক্ত সবজি চাষ করে আমরা নিজেরাও খেতে পারছি। ক্রেতারাও কিনে নিয়ে নিরাপদ সবজি খেতে পারছেন। এটাই আমাদের কৃষকদের আনন্দের বিষয়।'

পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম মিয়া বলেন, 'শাক সবজি ও ফসলের ক্ষতিকারক যেসব শোষক পোকা রয়েছে সেসব থেকে জৈব বালাইনাশক দিয়েই রক্ষা পাওয়া যায়। এসব এক একটি বালাইনাশক তৈরি করতে মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচ হয়। আগে সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ ও আকর্ষণ ট্র্যাপ ব্যবহার করেছেন চাষীরা। হলদে কালার ট্র্যাপটির আইডিয়া আমার। এখন কৃষকেরা এই কালার ট্র্যাপ ব্যবহার করেও পোকার হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে পারছে। দিন দিন এই পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষের পরিমাণ বাড়ছে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আবু হোসেন বলেন, 'নিরাপদ সবজি চাষের জন্য আমরা চাষীদের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। নিরাপদ সবজি উৎপাদন করতে তারা যেসব উপকরণ ব্যবহার করতে তাতে খরচ কমে আসছে। এছাড়া বাজারে আমাদের নির্ধারিত সবজির দোকানে তারা তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে পারছে। সেখান থেকে ক্রেতারা বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি কিনতে পারছে। আমরা আশা করি সামনে বিষমুক্ত সবজি চাষের পরিধি আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে।'

আরও পড়ুন