আন্তর্জাতিক, ভারত, লাইফস্টাইল, আইন ও কানুন

ভারতে আসছে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নীতিমালা

কাজী শাহরিন হক

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ৫ই নভেম্বর ২০১৯ ১২:৫১:৫৩ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর, বিদ্বেষ, গুজব, দেশবিরোধী প্রচার রুখতে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণবিধি চূড়ান্ত করা হবে বলে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

তবে এ বিষয়ে শুনানির জন্য জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে সর্বোচ্চ আদালত সময় বেঁধে রেখেছে বলে ডয়েচে ভেলে বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্য সরকারের সমালোচনায় আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা, এবং কারো বিরুদ্ধে কুরুচিকর পোস্ট করার অভিযোগে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে৷ এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সাংবাদিকও রয়েছেন।

ফেসবুক, ট্যুইটার-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া উপমহাদেশে সম্ভাবনা তৈরি করেছে মুক্ত গণমাধ্যমের।  দ্রুত ও অবাধ মতপ্রকাশের মঞ্চ হিসেবে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোতে তৈরি হওয়া এই মাধ্যমগুলো৷

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব মিডিয়াতে সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা শক্তিরা।  তবে অনেক ক্ষেত্রেই স্বাধীনতার সুযোগে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা শালীনতার সীমা অতিক্রম করছে বলে মনে করছেন অনেকেই৷

এছাড়া বাংলাদেশের মতোই ভারতেও এসব মিডিয়া ব্যবহার করে গুজব ছড়ানোর, বিদ্বেষ রটানোর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে অহরহ৷ তাই বাক স্বাধীনতা বজায় রেখে অপপ্রচার নিয়ন্ত্রণ করার মধ্যে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারের দাবি উঠছে৷

তবে এর মধ্যেই একের পর এক গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করায়, অথবা নিয়ে কার্টুন আঁকা এবং তাঁর ছবি বিকৃতি বা কুরুচিকর মন্তব্যের দায়ে।

সম্প্রতি গ্রেপ্তার হন কংগ্রেস নেতা ও সাংবাদিক সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়।  গত মাসে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়৷ এখন তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন৷ টাটার গাড়ি কারখানা ও জমির লড়াইয়ের জন্য পরিচিত সিঙ্গুরের বিজেপি কর্মী চন্দন ভট্টাচার্যকেও মমতার বিরুদ্ধে কুরুচিকর পোস্টের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়৷ তার ছবি বিকৃত করার জন্য অতীতে প্রিয়াংকা শর্মা নামে বিজেপি যুব মোর্চার নেত্রীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো।

সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রও গ্রেপ্তার হন মমতার বিরুদ্ধে একটি ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনের জন্য।  তবে গ্রেপ্তার হওয়া এই অধ্যাপক নিজেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে৷

তিনি বলেন, "মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকার অর্থ ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়ানো নয়৷ আবার সরকারের সমালোচনা করলেই গ্রেফতারি অসহিষ্ণুতার লক্ষণ৷ তাই একটা নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত৷"

অধ্যাপকের প্রস্তাব, "এখানে তৃতীয় একটি স্তর থাকা উচিত৷ মানবাধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গড়া হোক৷ কোনও অভিযোগ উঠলে এই কমিটিই বিচার করবে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে৷"

সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট ঘিরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টে অনেক মামলা বিচারাধীন৷ সেই মামলাগুলি সর্বোচ্চ আদালতে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর, বিদ্বেষ, গুজব, দেশবিরোধী প্রচার রুখতে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণবিধি চূড়ান্ত করা হবে৷ যদিও শীর্ষ আদালত বলেছে, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এ নিয়ে শুনানি হবে৷

সরকার চায়, কোনও আপত্তিকর বার্তার উৎসে থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য দিক হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক৷ কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচালকরা এ ব্যাপারে তাদের অক্ষমতার কথা জানিয়েছে৷

কী ধরনের বিধি হতে পারে, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ তবে বিধির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ জারি এই সমস্যার সমাধান নয় বলে মনে করেন তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায়৷ তিনি বলেন, "চারজনের আড্ডায় যে কোনো কথা বলাই যায়, সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখে দিলে সমস্যা হয়৷ তবে একটা সময় আসবে যখন এই মাধ্যম মানুষের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারবে না৷ সেটা ভাবনাচিন্তার একেবারে নীচের স্তরে চলে যাবে৷ রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক দলও তো নিজেদের প্রচার এটিকে কাজে লাগাচ্ছে৷"

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

 

আরও পড়ুন