জেলার সংবাদ, আইন ও কানুন

ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় জামাই-শ্বশুরের ২২ দিন হাজতবাস

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ২৭শে জানুয়ারী ২০২২ ০৫:৫৯:৪৯ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

জাল ও ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় ২২ দিন হাজতবাসের পর মুক্তি পেয়েছেন মঞ্জুরুল ইসলাম (৩২) ও শফিউল ইসলাম (৫৮) নামের দুজন কৃষক।

ঢাকার নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর আদালতে দায়ের হওয়া নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় গত বছরের ২৮শে ডিসেম্বর ক্ষেতলাল থানার পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। আইনজীবীদের যুক্তিতর্কে ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জাল ও ভুয়া প্রমাণিত হলে আদালতের নির্দেশে দীর্ঘ ২২ দিন হাজতবাসের পর ১৮ই জানুয়ারি তারা মুক্তি পায়। একইসঙ্গে আদালত জাল ও ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুত করার অপরাধ ও অপরাধে সহযোগীতার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার ইনচার্জকে (ডিবি ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ অনুযায়ী তদন্ত শুরু হয়েছে।

জানা যায়, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর সাখিদারপাড়ায় বাড়ি কৃষক শফিউল ইসলামের। তার জামাই মঞ্জুরুল ইসলামের বাড়িও একই গ্রামে। পেশায় তারা দুজনেই কৃষক। নারী নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে ঢাকার তাহমিনা রহমান নামের এক নারী মামলা করেন। মামলার এজাহারে আসামি করা হয় পাবনা সদরের চর প্রতাপপুর গ্রামের জনৈক এম এ সামাদ বকুলকে। ওই মামলার বরাত দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মঞ্জুরুল ও শফিউলের নাম ঠিকানা সম্বলিত আদালতের জাল সিল ও বিচারকের জাল স্বাক্ষরযুক্ত পরোয়ানা প্রস্তুতকারী কোন কর্মচারীর স্বাক্ষর বা নাম ও মোবাইল নম্বর যুক্ত কোন সিল ছাড়াই ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্ষেতলাল থানায় আসে।

সেই পরোয়ানায় গত ২৮শে ডিসেম্বর রাতে মঞ্জুরুল ও শফিউলকে ক্ষেতলাল থানার পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। জামাই-শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগের কথা শুনে চমকে ওঠেন পরিবার ও গ্রামবাসী। তারা পুলিশকে জানায় এ ঘটনায় তারা কোনভাবেই সম্পৃক্ত নয়। কিন্তু পুলিশ তাদের কোন কথা না শুনে রাতে থানায় নেয়ার পরের দিন ২৯শে ডিসেম্বর আদালতে উপস্থাপন করলে আদালতের বিচারক আতিকুর রহমান তাদের জয়পুরহাট জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে জয়পুরহাট হাজত থেকে গত ৭ই জানুয়ারি তাদের ঢাকার কেরানীগঞ্জ জেলহাজতে পাঠানো হয়।

পরবর্তীতে জয়পুরহাট চিফ জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিচারকের কাছে মামলার খণ্ড নথি পাঠানো হয়। ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-২ এর বিচারক মামলাটির নথি পর্যালোচনা করে জাল ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আটক শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলামকে রিলিজ দেয়ার নির্দেশ দিয়ে আদেশের অনুলিপি জয়পুরহাট মূখ্য বিচারিক আমলি আদালতে পাঠান। পরবর্তীতে মুখ্য বিচারিক আমলি আদালতের বিচারক মো. জাহাঙ্গীর আলম তাদের অব্যাহতির আদেশ দিলে দীর্ঘ ২২ দিন হাজতবাসের পর কেরানীগঞ্জ জেল হাজত থেকে গত ১৮ই জানুয়ারি তারা বাড়ি ফেরেন।

ভুক্তভোগী শফিউল ইসলাম বলেন, আমি কখনও ঢাকা যাইনি। অথচ মিথ্যা অভিযোগে হাতে হ্যান্ডকাপ এবং পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আমাকে ঢাকার জেলখানায় নেওয়া হলো। আমার মান-সম্মান সব শেষ হয়ে গেল। আমাদের মতো আর যেন কোন নির্দোষ ব্যক্তি ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় হয়রানির শিকার না হয়। আমি এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।

কৃষক শফিউলের মেয়ে মঞ্জুরুলের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, নারী নির্যাতন মামলায় শ্বশুর-জামাই গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে আমরা হতবাক হয়েছি। ঘটনাটি সামাজিকভাবে আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করেছে। যে ভুলে আমাদের মান-সম্মান গেল। তার দায় কে নিবে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

মহব্বতপুর গ্রামের আতাহার আলী বলেন, শফিউল এবং মঞ্জুরুল দু’জনেই কৃষক। মাঠে কাজ করে তাদের দিন চলে। ঢাকার আদালতে কিভাবে তাদের নাম গেল। আমরা জানতে চাই।

এ বিষয়ে ক্ষেতলাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নীরেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। যেভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় আসার কথা সেভাবেই এসেছে।

জয়পুরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. তরিকুল ইসলাম জানান, পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রাপ্ত দু’জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জাল ও ভুয়া বলে নিশ্চিত হয়ে আদালত তাদের মামলা হতে অব্যাহতি দিয়েছেন। এই অপরাধের সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে।

আরও পড়ুন