খোকা থেকে শেখ সাহেব, পরে বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা-সময়ের পরম্পরায় নানা উপাধিতে ভূষিত করা হয় বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে।
১৯৬৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহামানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়া হয়েছিল। রেসকোর্স ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দেওয়া ওই খেতাবের ৫২ বছর পার হলো।
পলাশীর আমবাগানে ডুবে যাওয়া বাংলার স্বাধীনতার সূর্য আবার কখনো উদিত হবে এই শঙ্কা ছিল পৌনে দুশ বছর ধরে। সাহস আর নেতার অভাবে বিদেশী শক্তির নিপীড়ণ আর নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিল বাংলার সাত কোটি মানুষ।
একজন নেতা চাই, জনগণের নেতা- যিনি অধরা স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দিয়ে, মুক্ত অর্থনীতির চাকা ঘুরাবেন, আলোর ঝিলিকে ফোটাবেন বাংলায় আনন্দের ফুল।
কিন্তু কোথায় সে নেতা? দেশ ভাগ হল। বাংলা দিখন্ডিত হল। পূর্ব পাকিস্তান চাদরে স্বাধীনতার নামে নতুন পরাধীনতা-শোষণের মুখে বাংলা, বাংলার মানুষ। মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার পায়তারা, অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক বৈষম্যে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ দিশেহারা।
১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধে স্পষ্ট হয়ে উঠে অরক্ষিত বাংলার চিত্র, সামরিক বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন শেখ মুজিবুর রহমান।
পাক-ভারত যুদ্ধ নিয়ে এক আলোচনা সভায় পাকিস্তানে যান শেখ মুজিবুর রহমান। লাহোরেই তিনি ঘোষণা করেন বাংলার অঘোষিত স্বাধীনতার সনদ ছয়দফা। ছয় দফা ঘোষণার পরপরেই শেখ মুজিব হয়ে উঠেন পূর্ব বাংলার অবিসংবাদিত নেতা।
নড়ে চড়ে বসে আইয়ুব খার স্বৈরচারি শাসন ব্যবস্থা। স্বাধিকার আন্দোলন দমাতে শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনের নামে দায়ের করা হয় আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা। গ্রেপ্তার হন তিনি।
উত্তাল হয়ে উঠে বাংলা। গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। পেশ করা হয় ১১ দফা। শুরু হয় গণঅভ্যূত্থান। আন্দোলনে শহীদ হন আসাদ, মতিউর, মকবুল, ক্যান্টনমেন্টে রুস্তম ও সার্জেন্ট জহুরুল হক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শামসুজ্জোহা।
কারাগার থেকে মুক্তি মেলে শেখ মুজিবের। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ডাকসুর তখনকার ভিপি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ জনসভায় শেখ মুজিবকে জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, '২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ রে বাঙালী জাতির পক্ষ থেকে তখনকার সেই রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে প্রিয় নেতাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেছিলাম।'
রাশেদ খান মেনন বলেন, 'তোফায়েল উঠে বক্তব্য শুরু করলেন, এবং বক্তব্য শুরুর এক পর্যায়ে তিনি বললেন মুজিব ভাই তুমি বাঙালী জাতির জন্য যা করেছো তাতে বাঙালীরা আজ তোমার কাছে চির কৃতজ্ঞ। সুতরাং এই সভা থেকে তোমাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান করলাম। বলতেই মাঠ থেকে সবাই সমর্থন জানালো এবং নিমেষেই শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধুতে রুপান্তরিত হলেন।'