ইসলামী বক্তাদের মধ্যে সম্প্রতি জনপ্রিয় ও অনেক তরুণদের কাছে আইডল হয়ে ওঠা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী, তাকে নিয়ে জামায়াতের প্রচারণা করাসহ নানা সমালোচনার জবাব দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার, ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন আজহারী। যেখানে তিনি বলেন, 'আমি কোন দলের এজেন্ট বা প্রোডাক্ট নই। আর কোন রাজনৈতিক দলের অর্থায়নে আমার শিক্ষা জীবনও কাটেনি। মিথ্যাচার যেন এদেশে মহামারিতে রুপ নিয়েছে। আর সেটা যখন প্রকাশ্যে, গণমাধ্যমে, দেশের কোন উচ্চ পদস্থ দায়িত্বশীলের মুখ থেকে প্রকাশ পায়, তখন আফসোস আর হেদায়েতের দোয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
'নিজের চিন্তা আর মতের বিরুদ্ধে গেলেই এদেশে একটা স্বস্তা ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়। আর সেটা হল "জামাত শিবির"। এবার আপনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হোন অথবা মনেপ্রাণে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক হোন। দ্যাট ডাজেন্ট মেটার। ভিন্নমতকে দমনের এই অপকৌশল পুরো জাতির ভাগ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। একজন দা’ঈ ইলাল্লাহর কোন দল নাই। তিনি সকল দলের, সকল মানুষের। তাদেরকে দলীয়করণ না করে ব্যাপক ভাবে দ্বীনের খেদমতের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। দেশের সব দলের মানুষ যেন তাদের দ্বারা আলোকিত হতে পারে সেটার পরিবেশ থাকা উচিত।'
'আমি সরকার বিরোধী নই। আমি অন্যায় বিরোধী। তাই, কোন অন্যায় দেখলে সে ব্যাপারে কথা বলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এবার সে অন্যায় যেই করুক না কেন, যে দলই হোক না কেন। ব্যক্তিগতভাবে, এদেশের রাজনীতিতে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। স্যোশাল এক্টিভিটি ও দা’ওয়াহ এক্টিভিটি এ দুটি কাজই হল আমার আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু। আমার মিশন হল এদেশে ইসলামের মধ্যমপন্থার সৌন্দর্য্যকে প্রমোট করা। যেটাকে আরবীতে বলে আল-ওয়াসাতিয়্যাহ। জীবন যাপনে ভারসাম্য, চিন্তায় ভারসাম্য, কাজে ভারসাম্য, এবং আচরণে ভারসাম্যপূর্ণ মুসলিম তৈরী করা।'
'ভিন্ন মতের ব্যাপারে আমি বরাবরের মতই শ্রদ্ধাশীল। সকল মুসলমানকে আপন ভাইয়ের মত শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি। তাদের নাজাতের জন্যে মন ভরে দোয়া করি। কারো পিছু লেগে থাকা, কাদা ছোড়াছোড়ি করা এবং কোন মুসলিম ভাইয়ের ব্যাপারে অন্তরে হিংসা পুষে রাখা পছন্দ করিনা। কারণ ইসলাম আমাকে এটা শিখায়নি। আর প্রিয় নবীর আদর্শও এমনটি নয়। আমি চাই বিভিন্ন ঘরনার আলেমরা সহনশীলতার ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের চর্চা করুক। তাদের উদারতার প্রভাব পরুক দেশের সকল শ্রেনীর মানুষের মাঝে। সংকীর্নতা আর হীনমন্যতা পরিহার করে, দ্বীনের সকল দ্বায়ীরা কুরআন সুন্নাহর সুধা বিলাতে থাকুক পুরো দেশ জুড়ে, পুরো পৃথিবী জুড়ে।'
প্রসঙ্গত, জামালপুরে গত মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আব্দুল্লাহ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে আজহারীসহ কিছু ধর্মীয় বক্তা অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে জামায়াতের প্রচারণা চালাচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে প্রকাশ্যে জামায়াতের রাজনীতির সুযোগ না থাকায় কৌশলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে এসব বক্তা জামায়াতের পক্ষে কথাবার্তা বলছেন। তারা কোরআন-হাদিসের যেসব ব্যাখ্যা দেয় তার অধিকাংশই মিথ্যা কথার আশ্রয় নিয়ে আজেবাজে কথা বলে। এসব বক্তাদের সামাজিকভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া, এর আগেও আজহারীকে নিয়ে নানা সমালোচনা করেন অনেকেই।
তরুণ ইসলামিক বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী অল্প কয়েকদিনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে যে ক’জন ইসলামি চিন্তাবিদ রয়েছেন, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কারণে তার নামের সঙ্গে ‘আজহারী’ উপাধি যুক্ত হয়েছে। বছরের বেশিরভাগ সময় মালয়েশিয়ায় থাকেন। সেখানে পিএইচডি করছেন তিনি।