জেলার সংবাদ, কোথায় বেড়াবো

৮শ' বছরের পুরনো দ্বীপে ঘুমায় সম্ভাবনা

অচিন্ত্য মজুমদার, ভোলা প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ১০ই মার্চ ২০২১ ০৫:১৬:১৩ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ধান, সুপারি, ইলিশের জেলা হিসেবে ভোলার খ্যাতি দেশজুড়ে। হিমালয় থেকে নেমে আসা তিনটি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রবাহিত পলি দিয়ে মোহনার বুকে জেগে উঠেছে দ্বীপজেলা ভোলা।

এ জেলার সৃষ্টির ইতিহাস যেমন আর্কষণীয়, ঠিক তেমনি এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যেও রয়েছে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। বিশেষ করে এখানকার চরাঞ্চলের অতিথি পাখির উড়ে বেড়ানো, হরিণের পালের ছোটাছুটি, নদীর বুকে সারি সারি জেলে নৌকা, দলবেঁধে বুনো মহিষের বিচরণ, একরের পর একর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, আকাশ ছোঁয়া কেওড়া বাগান আর সাগর মোহনার সৈকত সব কিছুই কঠিন হৃদয়ের মানুষেরও মন ছুঁয়ে যায়।

মনপুরা ২নং হাজিরহাট ইউনিয়নের জংলার খাল এলাকার কেওড়া বন

 

ভোলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপাসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ উপজেলা মনপুরার অবস্থান। প্রমত্তা মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ের পলি জমে এ দ্বীপটির জন্ম হয়। সাগরের কোল ঘেঁষে জন্ম নেওয়ায় স্থানীয়দের কাছে মনপুরা সাগরকন্যা হিসেবে পরিচিত। এখানে ভোরে সূর্যের আগমনী বার্তা আর বিকেলের পশ্চিম আকাশের সিঁড়ি বেয়ে এক পা দু’পা করে মেঘের বুকে হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়। আবার রাতের নতুন শাড়িতে ঘোমটা জড়ানো বধূর মত নিস্তব্ধতায় ছেয়ে যায় পুরো দ্বীপ। প্রায় ৮শ' বছরের পুরনো মনপুরা উপজেলা বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চল তথা দেশজুড়ে পরিচিত একটি নাম। এখানকার ইতিহাস বেশ প্রচীন। ৭শ' বছর আগে এখানে পর্তুগিজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিলো। যার প্রমাণ মিলে মনপুরায় আজও সে সময়ের লোমশ কুকুরের বিচরণ।

মনপুরার ঢাল চরে রাখালের মহিষ চড়ানো

 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরুপ লীলাভূমি মনপুরায় রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রের অপার সম্ভাবনা। পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আর্কষণীয় বিষয় হচ্ছে এখানকার হাজার হাজার একর জায়গা জুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এছাড়াও রয়েছে বাহারি প্রজাতির বৃক্ষ ও তরুলতা। আরো রয়েছে হরিণ, বানর, ভাল্লুকসহ নানা বৈচিত্র‌্যময় প্রাণি। এর গহীন জঙ্গলে ভয়ঙ্কর কিছু প্রাণি রয়েছে বলেও জনশ্রতিও রয়েছে।

মনপুরার রয়েছে ৮/১০টি বিচ্ছিন্ন চর। এগুলো হলো: চর তাজাম্মল, চর জামশেদ, চর পাতিলা, চর পিয়াল, চর নিজাম, লালচর, বালুয়ারচর, চর গোয়ালিয়া ও সাকুচিয়ার চর। আর চরগুলো দেখলে মনে হবে কিশোরীর গলায় মুক্তার মালা। এসব চরাঞ্চলে বন বিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজের বিল্পব। চোখ ধাঁধানো রূপ নিয়েই যেন এসব চরগুলোর জন্ম। চরগুলোতে রয়েছে মানুষের বসতি। যাদের জীবনযাত্রার মানও কিছুটা ভিন্ন ধরনের। জেলে, চাষি, দিনমজুরের পাশাপাশি খেয়া পার করে জীবকা নির্বাহ করেন এখানকার বেশিরভাগ মানুষ। তাই সবুজের সমারোহ আর পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত বিচ্ছিন্ন সাগরকন্যা মনপুরা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বের দাবিদার।

নৌবাহিনীর নির্মিত আবাসন প্রকল্পের উঁচু পুকুর পাড়ে হরিণের পাল

 

স্থানীয়দের দাবি, ভ্রমণপিয়াসী মানুষকে মুগ্ধতার বন্ধনে আটকে দেয়ার অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে সাগরকন্যার। শীত মৌসুমে এর চিত্র ভিন্ন ধরনের। সুদূর সাইরেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলগুলো যেন নতুন রুপ ধারণ করে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে শীত মৌসুমে বাংলাদেশে যেসব প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এরমধ্যে সিংহভাগই ভোলায় অবস্থান করে। তখন সাগরকন্যা মনপুরার চরে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।

দেশের অন্যসব পর্যটন কেন্দ্রের তুলনায় মনপুরার চিত্র কিছুটা ভিন্ন। মাইলের পর মাইল বৃক্ষের সবুজ সমাহার যেন ক্যানভাসে আঁকা শিল্পীর নিপুণ হাতে ছোঁয়া। যেখানে নানা প্রজাতির গাছের সংখ্যা রয়েছে পাঁচ কোটিরও বেশি। রয়েছে একটি ল্যান্ডিং ষ্টেশন। সেখান থেকে সাগরের উত্তাল ঢেউ এর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য। এছাড়া সম্প্রতি মনপুরার সাগর মোহনায় জেগে ওঠা প্রায় এক কিলোমিটার বালির বিচকে ঘিরে তৈরি হয়েছে দক্ষিণা হাওয়া সী-বিচ। এই বিচকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনা। সব মিলিয়ে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সাগরকন্যা আজও অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে।

মনপুরা আলম বাজার সংলগ্ন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল

 

মনপুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিনা আক্তার চৌধুরী জানান, 'নিঃসন্দেহে এ অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। মনপুরার অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, ভাল মানের হোটেল, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়াতে পারলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে মনপুরায়। তবে সরকারি, বেসরকারি কিংবা এনজিও সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা যদি গুরুত্বের সঙ্গে অবহেলিত এ জনপদের ওপর দৃষ্টি রাখে তাহলে খুব শীঘ্রই এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব।'

ঢাকা থেকে সরাসরি লঞ্চযোগে মনপুরা আসা যায়। সন্ধ্যায় লঞ্চে উঠে সকাল ৬টায় পৌঁছানো যায় মনপুরায়। এছাড়াও ভোলা ইলিশা থেকে রাতে লঞ্চে ও সি-ট্রাকে তজুমদ্দিন অথবা ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে যাতায়াত করা যায়।

আরও পড়ুন