জাতীয়, অপরাধ, স্বাস্থ্য

অনুমোদন ছিলো না, তবুও রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি!

শামীম আহমেদ

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ১০ই জুলাই ২০২০ ০৮:৩২:২০ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

অনুমোদন ছিলো না জেনেও করোনা চিকিৎসায় রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অজুহাত দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতে জরুরি অবস্থা চলছে তাই এতসব দেখা হয়নি। শুধু তাই নয়, চুক্তির নিয়ম না মেনেই সাহেদের চাহিদা অনুযায়ী আগাম টাকা দিতে কয়েক দফা মন্ত্রাণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অধিদপ্তর।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ২১শে মার্চ রিজেন্টে হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়। ওই দিনই হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল হাসান স্বাস্থ্য সচিব বরাবর সুপারিশ করেন। যেখানে বলা হয়, হাসপাতাল দুটিতে ৫০টি করে শয্যা এবং ৩টি করে আইসিইউ বেড রয়েছে। রোগ নির্ণয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে সরকারি কয়েকজন ডাক্তার ও নার্স এবং অর্থ দেয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

দুদিন পর সচিব বরাবর তিনি আবার একই সুপারিশ করেন। অনুমোদন নেই জানার পরও কেন এই সুপারিশ করলেন? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল হাসান বলেন, 'খুব জরুরি ভিত্তিতে আমাদের তাগিদ ছিলো। আমরা যখন পরিদর্শনে যাই তখন তাদের জনবল অবস্থা ঠিকভাবে দেখতে পাই বলে সেইভাবে আমরা রিপোর্ট করি। পরবর্তীতে যদি তারা জনবল সরিয়ে ফেলে সেক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টা বসে থেকে আমাদের মনিটর করা সম্ভব না। ল্যাব টেস্টের ব্যাপারে আমাদের জানা ছিলো না যে তারা দুই নম্বরি করছে।'

৩০শে এপ্রিল রিজেন্ট হাসপাতাল অধিদপ্তরে খরচ চেয়ে আবারো আবেদন করে, ৯ই মে খরচ দেয়ার জন্য সচিব বরাবর সুপারিশ করেন আমিনুল হাসান। এরপর, ১২ই মে সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়ার কথা জানিয়ে রিজেন্ট হাসপাতাল অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানায় ১১ জন চিকিৎসক এবং ১৫ জন নার্স দেয়া হয়েছে। রোগী বেড়ে যাওয়ায় তাদের আরো ২০ জন চিকিৎসক, ৩৯ বিসিএস থেকে ১৫ জন মেডিক্যাল অফিসার এবং আরো ১৫ জন নার্স দরকার।

কিন্তু রিজেন্টে পাঠানো সরকারি চিকিৎসকরা হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করেন। পরে তাদের সবাইকে প্রত্যাহার করা হয় রিজেন্ট থেকে। আমিনুল হাসান আরও বলেন, 'পরবর্তীতে যখন জানতে পারলাম তারা বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিচ্ছেনা, রোগীদের থেকে টাকা নিচ্ছে, তখন আমরা তাদের সতর্ক করি। এবং আমাদের যে সকল ডাক্তার ছিলো তাদের আমরা উইথড্র করে নেই।'

কিন্তু প্রত্যাহারের নথিতে লেখা হয়, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদের আপত্তির কারণে চিকিৎসকদের প্রত্যাহার করা হলো।

তারপর, পহেলা জুন সমঝোতা চুক্তি সংশোধন করে রিজেন্ট গ্রুপ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা আরো ৬০টি এবং আইসিইউ বেড ৯টি করা হয়েছে বলে জানায়। বাস্তবে এসব সুবিধা বাড়ানো হয়নি। সরকারের কাছে এক মাসের খরচ ১ কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করে। যেখানে অক্সিজেনের জন্য ৬২ লাখ টাকা, খাবার বাবদ ৩৩ লাখ টাকা, চিকিৎসক ও স্টাফদের বেতন বাবদ ৩১ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। ভবন দুটির ভাড়া মাসে ২২ লাখ টাকা এবং বিদ্যুৎ বিল ৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দেয়া হবে এমন শর্তের পরও রোগীদের কাছ থেকে বিল আদায় করে প্রতিষ্ঠানটি।

টিআইবি মনে করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়ী ব্যক্তিদেরও আইনের আওতায় না আনা গেলে শাহেদের মতো প্রতারকদের দমানো সম্ভব না। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'কোনভাবেই দায় এড়াতে পারেনা, তারা যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন, তাদের মৌলিক দায়িত্ব এটা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপেও যদি এটা হয় তাহলে তারা পদত্যাগ করতে পারতেন, দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতেন এভাবে যে আমি আমার ন্যায়সঙ্গত জায়গা থেকে কাজ করতে পারছিনা। আমাকে বাধা দেয়া হচ্ছে। সেই ভূমিকাটা তারা নিতে পারেনি, বরং তারা যোগসাজস করেছেন। এই গডফাদার যাদের বলা হয় তাদের যদি চিহ্নিত না করা যায় এসকল সমস্যা শুধু আমরা আলোচনাই করে যাবো।'

আরও পড়ুন