আমেরিকান বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম এই নেতা ও মানবাধিকার কর্মীর ৯৩তম জন্মদিন আজ।
১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। প্রথমে তার নাম ছিল মাইকেল লুথার কিং জুনিয়র। পরবর্তীকালে ‘মাইকেল’ বদলে ‘মার্টিন’ নামটি রাখা হয়।
খ্রিষ্টীয় ধর্মমত ও মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ মার্টিন লুথার কিং যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন। তার এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৬৪ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
বিশ্বনন্দিত এই নেতা ১৯৫৫ সালে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। একই বছর মন্টগামারি শহরে বাসে এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীর বর্ণবৈষম্যের শিকার হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত অধিকাংশ রাজ্যেই তখন শ্বেতাঙ্গদের জন্য বাস সার্ভিস সংরক্ষিত ছিল। কৃষ্ণাঙ্গদের বাসের সামনে বসার অনুমতি ছিল না। শ্বেতাঙ্গরা বসার পর কোনও সিট ফাঁকা থাকলে তবেই বসতে পারতেন কৃষ্ণাঙ্গ যাত্রীরা। ভরা বাসে সিট ছেড়ে শ্বেতাঙ্গদের বসতে দিত কৃষ্ণাঙ্গরা, এটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু ইতিহাস বদলে দিল রোজা পার্কস নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীর প্রতিবাদ, ভরা বাসে এক শ্বেতাঙ্গ যাত্রীকে সিট ছেড়ে দিতে অস্বীকার করলেন তিনি। ফলে তাকে দশ ডলার জরিমানা করা হল।
এই ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে ওঠে এক তরুণ যাজকের কণ্ঠ, তিনিই মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। শুরু হয় অভূতপূর্ব এক আন্দোলনের, তার নেতৃত্বে সাড়া দিয়ে টানা ৩৮৫ দিন বাস সার্ভিস বর্জন করে স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ অধিবাসীরা। বয়কটের মুখে শেষ পর্যন্ত যানবাহনে বর্ণবৈষম্য নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
১৯৬৩ সালে লুথার কিং জুনিয়র সরকারের গৃহীত বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঘোষণা করেন। সেবছর এক সমাবেশে তিনি তার বিশ্ববিখ্যাত বক্তৃতা প্রদান করেন, যা “আই হ্যাভ আ ড্রিম” নামে পরিচিত। যেখানে তিনি ‘সবার জন্য সমান’ এক আমেরিকা গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তার এই কালজয়ী ভাষণের প্রভাবে ১৯৬৪ সালে আমেরিকায় নাগরিক অধিকার আইন ও ১৯৬৫ সালে ভোটাধিকার আইন প্রণীত হয়। যার মধ্য দিয়ে কাগজে কলমে আমেরিকা থেকে বর্ণবাদ বিতাড়িত হয়েছিল।
১৯৬৮ সালে আততায়ীর গুলিতে বিশ্বখ্যাত এই মানবাধিকার কর্মী মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর এতবছর পরেও তার আদর্শ, ভাষণ ও বিভিন্ন উক্তি বিশ্বজুড়ে সহস্র মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগায়।
“যদি উড়তে না পার, তবে দৌড়াও; যদি দৌড়াতে না পার, তবে হাঁটো; হাঁটতে না পারলে হামাগুড়ি দাও, তবে তুমি যাই করো না কেন সামনের দিকে এগিয়ে চল।” - মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র