বাংলাদেশ, বিনোদন, ঢালিউড, টেলিভিশন

আজ আবুল হায়াতের ৭৬তম জন্মদিন

কামরুল ইসলাম

ডিবিসি নিউজ

সোমবার ৭ই সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৯:০৭:৪১ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশক আবুল হায়াত। আজ ৭৬ বছর পূর্ণ করলেন টিভি নাটকের সবচেয়ে সফল বাবা খ্যাতি পাওয়া এই অভিনেতা। শুভ জন্মদিন।

১৯৭১ সালের মে মাস, ঢাকা শহরে অবরুদ্ধ হাজারও পরিবারের মধ্যে মতিন সাহেবের পরিবার একটি। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও গৃহপরিচারিকা কে নিয়ে তিনি আতঙ্ক, ভয়-ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, সেই সময় তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নেন মুক্তিযোদ্ধা বদি। প্রতি মুহুর্তের মৃত্যুর আতঙ্কের মাঝেও স্বপ্ন দেখেন, দেশ একদিন স্বাধীন হবে। রেডিওটা কানে লাগিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা, বিবিসি, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শোনার চেষ্টা করেন সেই মতিন সাহেব।


গুগল থেকে নেওয়া ছবি

হুমায়ূন আহমমেদের বিখ্যাত চলচ্চিত্র 'আগুনের পরশমনি'র সররই মতিন আহমেদের কথা মনে পড়েছে। সেই মতিনের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে নিজের প্রতিভার সমুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখেন, তিনি দারুচিনি দ্বীপ সিনেমার সেই অতি দারিদ্রের মাঝেও স্বপ্নদ্রষ্টা 'সোবহান সাহেব' চরিত্রে অভিনয় করে পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার।

তবে তিনি মূলত নাটকের মানুষ। নাটক দিয়েই নাম লিখান শোবিজ জগতে। ১৯৬৯ সালে 'ইডিপাস' নাটকের মধ্য দিয়ে টেলিভিশন জগতে আত্বপ্রকাশ, ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন টিভি নাটকের নিয়মিত অভিনেতা, প্রধান চরিত্রে অভিনয় না করেও ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিলেন।

বহুব্রীহির মূল চরিত্র সোবহান সাহেবকে ছাপিয়ে অয়োময়ের 'কাশেম' চরিত্রে করেছিলেন সেরা অভিনয়। নক্ষত্রের রাত, আজ রবিবারে বাবার চরিত্রের পাশাপাশি জনপ্রিয় 'মিসির আলি' হয়েও নিজেকে প্রতিষ্টিত করেছন। তিনি বাংলা চলচ্চিত্র ও নাট্যঙ্গনের কিংবদন্তি অভিনেতা 'আবুল হায়াত'।

ভারতের পশ্চিমববঙ্গে জন্ম হলেও, দেশ বিভাগের পর চলে আসেন চট্টগ্রামে। বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা পাঠ চুকিয়ে প্রকৌশলী হিসেবে নিযুক্ত হন ওয়াসায়। ওয়াসার সেই ইঞ্জিনিয়ার অভিনয় দিয়ে হয়ে উঠেন টিভি নাটকের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় 'বাবা'। অভিনয় করেছেন অসংখ্যা নাটকে।

এইসব দিনরাত্রি,বহুব্রীহি,অন্য ভুবনের ছেলেটা, দ্বিতীয় জন্ম, শেখর, অয়োময়, নক্ষত্রের রাত, আজ রবিবার থেকে জোছনার ফুল, শুকনো ফুল রঙ্গিন ফুল,আলো আমার আলো, নদীর নাম নয়নতারা, খেলা, শনিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিট, হাউজফুল, এফ এন এফ সহ অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটকে অভিনয় করে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।

শুধু অভিনয়েই নয়, নাট্যকার হিসেবেও নিজের প্রতিভার আলো ছড়িয়েছেন। পরিচালনা করেছেন উন্মেষ, দিল দরিয়া, জোছনার ফুল, মন+ হৃদয়, হারানো সুর, শুকনো ফুল রঙ্গিন ফুল সহ, মধাহ্ন ভোজ কি হবে, হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মত বহু আলোচিত নাটক। সম্প্রতি 'উপহার' নাটকেও ছড়িয়েছেন নিজের দ্যূতি।

১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটকের 'তিতাস একটি নদীর নাম' চলচ্চিত্রে স্বল্প উপস্থিতিতে প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেন। একই বছর 'অরুণোদ্বয়ের অগ্নিসাক্ষী' সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। তবে নব্বইয়ের দশকে এসে পুরোদমে চলচ্চিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, স্বপ্নের ঠিকানা, প্রানের চেয়ে প্রিয়, প্রেমের তাজমহল থেকে শঙ্খনীল কারাগার, আগুনের পরশমনি, জয়যাত্রা, দারুচিনি দ্বীপ, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, অজ্ঞাতনামা, ফাগুণ হাওয়ায় সহ অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন।

সাহিত্য জগতেও নিজের নাম লিখিয়েছেন, এছাড়া তিনি বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন,উপস্থাপক হিসেবেও প্রশংসিত হয়েছিলেন। মঞ্চনাটকেও তিনি ছিল অনন্য।

আবুল হায়াত ১৯৭০ সালে মেজ বোনের ননদ মাহফুজা খাতুন শিরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান বিপাশা হায়াত। ছয় বছর পর জন্ম নেয় নাতাশা হায়াত। তারা দুজনেই শোবিজের জনপ্রিয় মুখ।

আরও পড়ুন