জেলার সংবাদ

আদালতে মামলা দায়ের করায় থানায় নিয়ে রাতভর নির্যাতন

আকরাম হোসেন

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৫:৫৬ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

আদালতে মামলা দায়ের করায় থানায় নিয়ে বাদীকে রাতভর নির্যাতন করেছেন বরগুনা থানার পুলিশ।

বুধবার দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী বিনয় চন্দ্র শীল। বিনয় চন্দ্র শীল পেশায় একজন দরিদ্র নরসুন্দর। তার বাড়ি সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের আমতলা গ্রামে।

সংবাদ সম্মেলনে বিনয় চন্দ্র শীল বলেন, সম্প্রতি বরগুনার আদালতে তিনি বালিয়াতলী ইউনিয়নের সাবেক মহিলা  ইউপি সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা খালেদা ইসলাম সুইটিকে বিবাদী করে ব্ল্যাংক রেপ কাগজ (কার্টিজ পেপার) উদ্ধারের একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলার প্রেক্ষিতে বিনয় চন্দ্র শীলের স্বাক্ষর করা ওই ব্ল্যাংক রেপ কাগজ উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

ওই মামলা তুলে নিতে আওয়ামী লীগ নেত্রী খালেদা ইসলাম সুইটির পক্ষ নিয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মাইঠা স্ট্যান্ড থেকে জোরপূর্বক তাকে পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে যায়। পরে গভীর রাত পর্যন্ত বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম তারিকুল ইসলাম তাকে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের সময় তাকে বৈদ্যুতিক শকসহ নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন তিনি। এসময় আওয়ামী লীগ নেত্রী খালেদা ইসলাম সুইটিসহ তার বিরোধীয় পক্ষের লোকজন থানায় উপস্থিত ছিলো বলেও জানান তিনি। নির্যাতনের কারণে বিনয় চন্দ্র শীল বর্তমানে হাঁটতে পারছেন না এবং মেরুদন্ডের ব্যথায় ভুগছেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে চিকিৎসার জন্যে তিনি বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বিনয় চন্দ্র শীল আরও জানান, বেশ কিছুদিন ধরে তার স্ত্রী ও মাদকাসক্ত অবাধ্য ছেলেদের সাথে তার বিরোধ চলে আসছিলো। এ বিষয়ে সালিশ বৈঠক হলে খালেদা ইসলাম সুইটি রোয়েদাদ লিখবেন বলে ব্ল্যাংক রেপ কাগজে (কার্টিজ পেপার) তার স্বাক্ষর নেন। পরে তার স্বাক্ষরযুক্ত ওই ব্ল্যাংক রেপ কাগজে জোরপূর্বক ও অন্যায়ভাবে তার ছেলে ও স্ত্রীর নামে জমি লিখে দিতে বলেন তিনি। এতে তিনি রাজি না হয়ে তার স্বাক্ষরযুক্ত ব্ল্যাংক রেপ কাগজ ফেরৎ দেয়ার জন্যে বারবার অনুরোধ করেন। ফেরৎ না পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি বরগুনার আদালতে সংশ্লিস্ট কয়েকজনকে বিবাদী করে তার স্বাক্ষরযুক্ত ওই ব্ল্যাংক রেপ কাগজ উদ্ধারের একটি মামলা দায়ের করেন।

বিনয় চন্দ্র শীল আরও বলেন, পুলিশ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেবে, তা না দিয়ে উল্টো প্রতিপক্ষের পক্ষ নিয়ে তারা তাকে নির্যাতন করেছেন। তিনি এ ঘটনার বিচার চান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিনয় চন্দ্র শীলের বৃদ্ধ বাবা বলরাম চন্দ্র শীল (৭৫) বলেন, তার ছেলের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় কোন মামলা নেই। কোথাও কোন অভিযোগও নেই। তারপরেও তার ছেলেকে এভাবে অন্যায়ভাবে নির্যাতন করার বিচার চান তিনি।

বিনয় চন্দ্র শীলের একজন প্রতিবেশী মো. শহিদুল ইসলাম স্বপন (৪৮) বলেন, বিনয় চন্দ্র শীলের সাথে তার স্ত্রী কাজল রাণীর কলহের জের ধরে তার ছেলে বিশ্বজিৎ শীল (২২) প্রায়ই তার বাবাকে মারধর করে থাকে। এসব বিষয় নিয়ে তারা অনেকবার তাদের মিল মিমাংসা করার চেষ্টা করেছেন। 

এ বিষয়ে খালেদা ইসলাম সুইটি সাংবাদিকদের জানান, তার বিরুদ্ধে বিনয় চন্দ্র শীল যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়। তাদের মধ্যকার বিরোধ মিমাংসায় সালিশ হয়েছে। রোয়েদাদ লেখার কাজ চলছে।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম তারিকুল ইসলাম বলেন, তিনি ওইদিন রাত ১০টা থেকে অন্যত্র ব্যস্ত ছিলেন। এসময় ওসি তদন্ত শহিদুল ইসলাম মামলার বাদী বিনয় চন্দ্র শীল এবং বিবাদী খালেদা ইসলাম সুইটিকে নিয়ে মিল-মিমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিল মিমাংসা হয়নি।

এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক জানান, এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে তারপরে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

আরও পড়ুন