জেলার সংবাদ, কৃষি

আমন চাষে ব্যস্ত কৃষক, ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা

অচিন্ত্য মজুমদার, ভোলা প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

সোমবার ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৪৯:০০ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ভোলায় আমন ধান চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে কৃষকরা। চাষাবাদ আর চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রোপা আমন আবাদের ধুম চলছে। জমি তৈরি, চাষাবাদ আর জমিতে চারা রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এবছর পর্যাপ্ত বৃষ্টির পাশাপাশি আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমনের সবুজ মাঠে সোনালী স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। তবে আশঙ্কা রয়ে গেছে ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, এখন আমন চাষের ভরা মৌসুম চলছে। শ্রাবণের মাঝামাঝি সময় এসে প্রত্যাশিত বৃষ্টি পেয়ে কৃষক জমিতে চাষ আর চারা রোপণে ব্যস্ত। কেউ ধান গাছের আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। বিস্তৃর্ণ ক্ষেতের সবুজ পাতায় বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। বর্তমানে ধান গাছের পরিচর্যায় যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের। রোদ, ঝড়-বৃষ্টিতে একমনে কাজ করেন তারা। কাজের ফাঁকে মাঠের ক্ষেতে বসেই খাচ্ছেন সকালে নাস্তা আর দুপুরের খাবার।

কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলার সাত উপজেলায় ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ৯৩২ মেট্রিক টন আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ৬৭ হাজার ৭৬ মেট্রিক টন, দৌলতখান উপজেলায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ৪৫ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ৪৯ হাজার ৪৭৪ মেট্রিক টন, তজুমদ্দিন উপজেলায় ১১ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে ৩০ হাজার ১৪১ মেট্রিক টন, লালমোহন উপজেলায় ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ৬৪ হাজার ৭৭৪ মেট্রিক টন, চরফ্যাশন উপজেলায় ৭২ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ২৫ মেট্রিক টন ও মনপুরা উপজেলায় ১২ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে ২৮ হাজার ৪৬২ মেট্রিক টন আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভোলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে রোপা আমন চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। শ্রাবণ থেকে শুরু হলেও ভাদ্র মাস জুড়ে চলবে চারা রোপণ কাজ। আবার কার্তিক মাসের শুরু থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আমন ধান কাটা মাড়া শেষ হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গোলায় উঠবে সোনালী ফসল এমনটাই প্রত্যাশা কৃষকদের।

ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের কৃষক আবদুল কাদের জানান, চলতি মৌসুমে তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি পাওয়ায় চাষাবাদে কোন অসুবিধা হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ‌ফলনও বেশ ভালো হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের কৃষক কেরামত আলী সুজা ও জামাল হোসেন জানান, পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কৃষি অফিসের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ, সার দেয়া ও আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত রয়েছেন আর সব কৃষকের মতো তারাও। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তাদের কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।

তবে ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে নানা জটিলতার কারণে বাধ্য হয়েই ব্যাপারিদের কাছে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার সহজ উপায়ে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে নিলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হতো বলে মনে করছেন তারা।

উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নবিপুর গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ ও সালাম বেপারী জানান, খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে শুকানো, ফ্যানিং করা, ব্যাংক একাউন্ট খোলা, ময়েশ্চারসহ নানা রকম ঝামেলা পোহাতে হয়। ধান দেয়ার পরও টাকা উঠাতে গিয়ে ধাপে ধাপে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। আর খোলা বাজারে ঝামেলা ছাড়াই ধান বিক্রি করা যায়। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে তারা খোলা বাজারে ধান বিক্রি করেন। তাই সহজ উপায়ে কৃষকের কাছ থেকে সরকারের ধান কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করা না গেলে প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবে বলে জানান তারা।

ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা আমন ধানে লাভবান হবে। এ বছর জেলার সাত উপজেলায় ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এছাড়া কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে এ বছরও ২৬ টাকা কেজি হারে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন