জেলার সংবাদ, অপরাধ

আসলে জামায়াত, ওপরে ওলামালীগ

Kamrul Islam Rubel

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ১৫ই অক্টোবর ২০১৯ ০৫:২৩:৪২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

প্রকাশ্যে ওলামা লীগের কথা প্রচার করলেও, গোপনে জামায়াত ও জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

প্রকাশ্যে ওলামা লীগের রাজনীতি করার কথা প্রচার করলেও গোপনে জামায়াতের রাজনীতি ও জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মাওলানা আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।

গোপনে জামায়াত ও জঙ্গি কার্যক্রমের পৃষ্টপোষকতা করার অভিযোগে গেল রবিবার রাতে পাবনা শহরের মনসুরাবাদ আবাসিক এলাকা থেকে সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ি কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।  এ সময়, বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই ও ল্যাপটপ জব্দ করে পুলিশ। পরে, গতকাল সোমবার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেনকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাবনা শহরের মনসুরাবাদ আবাসিক এলাকার ৫নং সড়কের ১১৯ নম্বর বাড়িটির মালিক মাওলানা আনোয়ার হোসেন। সেখান থেকেই তাকে আটক করা হয়। মাওলানা আনোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন দোতলা বাড়ির নিচিতলায় জামায়াতের নারী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংগঠনের আস্তানা ছিল। এখান থেকে মেয়েদের সংগঠিত করা হতো এবং নাশকতার পরিকল্পনা করা হতো। পরে, সেখানে অভিযান চালিয়ে জামায়াতের ১৩ জন নারী সদস্যসহ অধ্যক্ষ মাওলানা আনোয়ার হোসেনকে আটক করে পুলিশ।

তাকে রবিবার রাতে আটক করার অনেকেই তার বিরুদ্ধে জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে অভিযোগ করে।

এ বিষয়ে ধুলাউড়ি কামিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, অধ্যক্ষ যদি জঙ্গিদের আশ্রয় বা প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন তাহলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচার দাবি করি। তবে, তিনি জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কথা গোপন করে সবার কাছে নিজেকে ওলামা লীগ বলে দাবি করতেন।

মাদ্রাসা কমিটি পরিচালনা কমিটির সভাপতি আরও জানান,  স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে অধ্যক্ষ মাওলানা আনোয়ার হোসেন মাদ্রাসার হাট নিজেদের কব্জায় রেখে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন। গত পাঁচ বছর ধরে অন্য কাউকে এর শিডিউল ক্রয় করতে দেননি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সহায়তায় জামায়াত নেতা মাওলানা আনোয়ার  মুহাদ্দিস থেকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বনে যান।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ রবিবার রাত ৯.৩০টার দিকে মাওলানা আনোয়ার হোসেনের বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং সেখান থেকে বৈঠক চলা অবস্থায় জামায়াতের ১৩ নারী সদস্য এবং বাড়ির মালিক অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেনকে আটক করে।

আটককৃতরা হলেন, সিরাজগঞ্চ জেলার বেলকুচি থানার গোপালপুর গ্রামের মোঃ আব্দুল মজিদের মেয়ে রাবেয়া খাতুন (২৫), বগুড়া গাবতলি থানার আফসার আলীর মেয়ে লুমা খাতুন (২৮), পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার চিনাখড়া গ্রামের মোঃ আমিন উদ্দিনের মেয়ে মোছাঃ তছলিমা (১৮), পাবনার চাটমোহর উপজেলার বোয়ালমারী এলাকার মোঃ মুছাব আলীর মেয়ে মোছাঃ মাহাফুজা (২২), পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর নতুনপাড়ার সোরাব মোল্লার মেয়ে নাজমা খাতুন (২৭), নাটোরের কালিকাপুর এলাকার মৃত মহসিন আলীর মেয়ে ফাতেমা খাতুন (২২), নাটোর লালপুরের মোঃ আমজেদ আলীর মেয়ে আসমাউল হোসনা (২৫), ঢাকা মিরপুরের মোঃ আলী আহম্মেদের মেয়ে রুমা খাতুন (৩০), পাবনা বলরামপুর এলাকার আহম্মেদ প্রাং এর মেয়ে লাকী খাতুন (২৪), বগুড়া নাড়লী থানার মোঃ শামসুজ্জামানের মেয়ে মোছাঃ শারমিন (২৬), সিরাজগঞ্জ বেলকুচি থানার মোঃ আতাউর রহমানের মেয়ে আরিফা খাতুন (২৮), পাবনা আটঘরিয়া উপজেলার মোঃ বাকি বিল্লার মেয়ে শামীমা নায়রিন (২৮), সিরাজগঞ্জ জেলার আলোকদিয়া গ্রামের আব্দুল মালেক খানের মেয়ে তানজিদা খানম (২০), পাবনা আতাইকুলা থানার গঙ্গারামপুার গ্রামের মোঃ আনোয়ার হোসেনের মেয়ে মোছাঃ তাসলিমা খাতুন (২০)।

এ বিষয়ে পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, 'আটককৃতদের জিঙ্গাসাবাদে অনেক তথ্য বের হয়ে আসছে। বেশ কিছুদিন আগে বাড়িটি সামিমা নাসরিন নাজমা, মৌসুমি আঁখি, মাহাফুজা ও রুমা নামে চার মেয়ে ভাড়া নেয়। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে একত্রিত হয়ে জিহাদী কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ গ্রহণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতো বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

আরও পড়ুন