অপরাধ, বিশেষ প্রতিবেদন, প্রবাস

ইরাকে অপহরণ চক্র গড়ে বাংলাদেশিদের জিম্মি করছে বাংলাদেশিরাই

আকরাম হোসেন

ডিবিসি নিউজ

শনিবার ২৮শে আগস্ট ২০২১ ০৯:১১:২৫ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ইরাকে দুর্ধর্ষ অপহরণ চক্র গড়ে তুলেছে চার বাংলাদেশি। ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে কিংবা কম খরচে প্রমোদ ভ্রমণের টোপ ফেলে ইরাক-প্রবাসী বাংলাদেশিদের জিম্মি করছে তারা।

নির্যাতন চালিয়ে বাংলাদেশে ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে আদায় করছে মুক্তিপণ। চক্রটির হয়ে দেশে সক্রিয় চারজনের মধ্যে দু'জন গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ইরাক থেকে চার অপহরণকারীকে ফেরৎ আনার চেষ্টা চলছে।

শেকলবন্দি জীবন। অস্ফুট স্বরে মুক্তির আকুতি। একটু পানির জন্য হাহাকার। এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি ইরাকে অপহরণ চক্রের কাছে বন্দি বাংলাদেশি তরুণ আব্দুল্লাহ হক রাব্বির।

সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে প্রায় চার বছর আগে ইরাকে পাড়ি জমান ঢাকার কাওরান বাজারের মাছ বিক্রেতা বাদল মিয়ার বড় সন্তান রাব্বি। দেশটির কুর্দিস্তানে রেস্তোঁরায় কাজ করে ভালই চলছিল তার জীবন। কিন্তু করোনা মহামারীর প্রভাবে রেস্তোঁরাটি বন্ধ হয়ে গেলে শুরু হয় দুর্দশা। এই সংকটকে পুঁজি করে ইওরোপে পাঠানোর আশা দেখিয়ে রাব্বিকে জিম্মি করে বাংলাদেশি অপহরণ চক্র।

ইরাক থেকে ফোন করে রাব্বির বাবার কাছে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।

অপহৃত রাব্বির বাবা বাদল মিয়া বলেন, আমাকে আমার ছেলে ফোন করে বলে তাকে অপহরণ করা হয়েছে দশ লাখ টাকা না দিলে মেরে ফেলা হবে। তাকে অনেক নির্যাতন করা হচ্ছে,কোন ধরনের খাওয়া দাওয়া দিচ্ছে না।

ছেলের জীবন বাঁচাতে মুক্তিপণ দাবিকারীদের দেয়া বাংলাদেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাবে পাঁচ লাখ টাকা জমা দেন বাবা। এরপর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় অপহরণকারীরা।

দিশেহারা পিতা হাতিরঝিল থানায় মামলা করলে তদন্তে নামে পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে শনাক্ত হন শাহনাজ বেগম নামের এক নারী, যিনি রাব্বির বাবার দেয়া মুক্তিপণের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছিলেন। শাহনাজ বেগম রাজারবাগ প্রশান্তি হাসপাতালের আয়া। ফরিদপুর থেকে গ্রেপ্তার হন চক্রের আরেক সদস্য রনি মুন্সী।

দু'জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশ-ইরাক মিলিয়ে অপহরণ চক্রের আট সদস্যকে শনাক্ত করে পুলিশ। এরমধ্যে ইরাকে অবস্থানকারী ফরিদপুরের জহুরুল ইসলাম, হাবিব ফকির, জিয়াউর রহমান এবং সুনামগঞ্জের শিহাব উদ্দিনকে ফেরৎ আনার প্রক্রিয়া চলছে। 

ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, নির্মমভাবে অত্যাচার করে তা ভিডিও করে আত্মীয়স্বজনকে পাঠিয়ে তারা টাকা চায়। তারা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার দেয় টাকা পাঠানোর জন্য। এভাবে এমন একটি অপহরণ চক্রের সন্ধান আমরা পেয়েছি। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

দেশে অবস্থানরত চক্রের বাকি দুই সদস্য আতিয়া সুলতানা নিপা ও মুরাদ ফকিরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

আরও পড়ুন