আন্তর্জাতিক, আমেরিকা

করোনায় আর্থ-রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটে জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্র

মুহাম্মদ খালেদ হাসান

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ৭ই জুলাই ২০২০ ০১:৩৩:৪৪ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

চীন থেকে করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সবচেয়ে বেশি মৃতের সংখ্যা এ দেশটিতেই।

করোনার প্রকোপে আমেরিকার অর্থনীতি বিপর্যস্ত, দেখা দিয়েছে তীব্র সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট। করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের ভেতরে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ত্রিশ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং মৃতের সংখ্যাও এক লাখ পার হয়ে গেছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে অবস্থান করছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচকরা মনে করেন, শুরুতে করোনার প্রাদুর্ভাবের ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের মিথ্যাচারিতা ও অনেক বিলম্বে পদক্ষেপ নেয়ায় এতো বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত ও মারা যাবার ঘটনা ঘটেছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দেশটি সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েছে। বেকারত্ব, একের পর এক কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে যাওয়া, বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদন কমে যাওয়া অথবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি কারণে অর্থনীতিতে নেমে এসেছে ভয়াবহ ও নজিরবিহীন বিপর্যয়। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গেছে এবং পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে।

এদিকে, মার্কিন শ্রম দফতরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কর্মহারা আরো তিন লাখ মানুষ সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। এরফলে কর্মহীনের সংখ্যা তিন কোটি ৬৫ লাখে পৌঁছেছে। মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ১৫মে আলাদা আলাদা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শিল্প ও খুচরাপণ্য উৎপাদনের পরিমাণ নজিরবিহীনভাবে কমে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের কারণে গত এপ্রিলে শিল্পপণ্য উৎপাদনের পরিমাণ ১৩.৭ শতাংশ কমে গেছে যা কিনা অর্থনীতির জন্য অনেক বড় ধাক্কা।

অন্যদিকে, মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুচরা পণ্য বিক্রির পরিমাণ ১৬.৫ শতাংশ কমে গেছে। এ পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় করোনার প্রাদুর্ভাবের পর আমেরিকায় মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে যা অতীতের সব রেকর্ড ছড়িয়ে গেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আরো ভয়াবহ পরিণতির ব্যাপারে সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানুচিন সব কিছু বন্ধ থাকার ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ আমেরিকার অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। করোনা বেড়েই চলেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেছেন, কাজের পরিবেশ ধরে রাখার জন্য অবশ্যই কিছু একটা উপায় বের করতে হবে তা না  হলে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দার সম্মুখীন হতে হবে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, করোনার ভয়ে যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য অর্থনীতির চাকা বন্ধ রাখা হয় তাহলে মার্কিন অর্থনীতি ধসে পড়বে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন অর্থমন্ত্রী এমন সময় এসব আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করলেন যখন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বহুবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এখনই তড়িঘড়ি করে যদি অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেয়া হয়, সব অফিস ও কর্মস্থল খুলে দেয়া হয় তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না এবং নতুন করে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হবে। কিন্তু তারপরও বাণিজ্যমন্ত্রীসহ ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি খুব একটা আমলে না নিয়ে অর্থনীতিতে ধ্বংসাত্মক প্রভাব নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত।

খ্যাতনামা অর্থনৈতিক বিশ্লেষক জিম ক্র্যামার বলেছেন, 'এভাবে সবকিছু বন্ধ থাকলে আমেরিকার সামনে মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করছে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।'

তিনি আরো বলেন, 'আমরা অর্থনীতির সমস্ত দরজা বন্ধ রাখতে পারছি না আবার খোলাও রাখতে পারছি না। কিন্তু এভাবে সব কিছু বন্ধ থাকলেতো চলবে না। অর্থনীতির প্রায় সমস্ত  কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে এবং এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে মার্কিন অর্থনীতি ধসে পড়বে।'

করোনার থাবায় আর্থ-সামাজিক ছাড়াও রাজনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। করোনা ইস্যুতে রাজনৈতিক বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। মার্কিন কংগ্রেস ও  হোয়াইট হাউজের বাগবিতণ্ডার মূলে এখন করোনা। কংগ্রেসে ডেমোক্রেট দলের আইন প্রণেতারা মনে করেন, সব অঙ্গরাজ্যে করোনা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এবং ব্যাপক সংখ্যক মানুষের প্রাণহানীর জন্য ট্রাম্পের ভুল নীতি দায়ী। যদিও  ট্রাম্প এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য সব কিছু খুলে দেয়ার চেষ্টা করছেন।

প্রকৃতপক্ষে, করোনার ছোবলে আমেরিকা ইতিহাসে নজিরবিহীন সংকটে পড়েছে। আমেরিকা এ মুহূর্তে আর্থ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কিন্তু এ পরিস্থিতির এখনই অবসানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আগামী বহু বছর ধরে এ ক্ষতির গ্লানি আমেরিকাকে বয়ে বেড়াতে হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

আরও পড়ুন