জেলার সংবাদ, বিশেষ প্রতিবেদন, নারী

করোনায় বেড়েছে বাল্যবিয়ের হার

শামীম আহমেদ

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ২৫শে জুন ২০২১ ১০:৫৪:৪৪ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

করোনার মধ্যে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বেড়েছে নীলফামারীতে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এই হার দ্বিগুণ বলে জানিয়েছে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাজ করা সংগঠনগুলো। দারিদ্র্য এবং করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকেই মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের সোনিয়া। ১৩ বছরের এই কিশোরীর বিয়ে হয় কয়েক মাস আগে। পড়াশোনা করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন ছিল সোনিয়ার। কিন্তু বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে সেই স্বপ্ন অংকুরেই শেষ হয়ে গেছে।

সোনিয়া বলেন, আম তো চেয়েছিলাম পড়াশোনা করতে, কিন্তু ওরা আমাকে পড়াশোনা করতে দেয়নি। রোজগার নেই, তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিয়েছে আমার মামারা।'

সোনিয়ার মতো বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন আরো অনেকে। শারীরিক নানা জটিলতার পাশাপাশি শ্বশুরবাড়িতে লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

বাল্যবিয়ের শিকার লাইলী জানান, 'অনেক সম্যসা হয় যেমন গা-পা ব্যাথা করে, বসলে উঠলে মাথা ঘুরায়, চোখ-মুখ আঁধার হয়ে আসে। আমার শরীর খুব দুর্বল ছিলো, এ কারণে আমার বাচ্চাও এরকম হয়েছে।'

করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ এবং আয় কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার কথা জানান অভিভাবকরা।

এক অভিভাবক বলেন, 'টাকা-পয়সা নাই তাই ছোট বয়সেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। তবে দোষ পেলে স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বকা দেয়।'

শারীরিকভাবে অপরিপক্কতায় গর্ভধারণসহ নানা জটিলতায় পড়তে পারেন বাল্যবিয়ের শিকার এসব কিশোরী। এমনকি মৃত্যু ঝুঁকিও রয়েছে বলে জানান মেডিক্যাল অফিসার মৌসুমি বৈষণ। তিনি বলেন, 'যদি পুরোপুরি উপযুক্ত হওয়ার আগেই সে গর্ভধারণ করে ফেলে, তাহলে তার শারীরিক পরিপক্কতা হয়না, গর্ভধারণের উপযুক্তও হয়না। এর ফলে অনেক প্রকার শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হয়।'

তবে জেলায় বাল্য বিয়ে রোধে তৎপরতার কথা জানায় প্রশাসন। জলঢাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বলেন, 'আমরা যদি আরো সচেতন থাকি তাহলে আমরা ভালো ফলাফল পাবো। প্রশাসন সোচ্চার আছে, আমরা যেখানে খবর পাচ্ছি সেখানে আমরা বাল্যবিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করছি।'

নীলফামারীর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, 'মেয়েরা সাধারণত পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় বেশি ভোগে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ কারণেই বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটছে।'

২০২০ সালের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৬ মাসে জেলায় বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন ৬৪ জন। আর করোনা মহামারিতে এই হার বেড়েছে দ্বিগুণ। যদিও এর কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে।

আরও পড়ুন