বাংলাদেশ, জেলার সংবাদ

করোনা: মানবতার সেবায় শিরিন-জিয়া দম্পতি

নাটোর প্রতিনিধি 

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ১লা এপ্রিল ২০২০ ১১:১০:৫৯ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

নিজেদের চিকিৎসার জন্য জমিয়ে রাখা অর্থ বিলিয়ে দিচ্ছেন মানবতার সেবায়।

শিরিন-জিয়া দম্পতি নিজেদের চিকিৎসার জন্য সঞ্চিত অর্থ বিলিয়ে দিচ্ছেন মানবতার সেবায়। সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস সংক্রমণে দিশেহারা। অর্থনীতির চাকা যেখানে অচল হয়ে যাচ্ছে। এই দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পরে মানুষ কী খেয়ে বাঁচবে সেটা নিয়ে যখন অর্থনীতিবিদদের ভ্রূকুঞ্চিত হচ্ছে। সেই মুহূর্তে গৃহহীন এক দম্পতি নিজেদের দুরারোগ্য ব্যাধির জন্য জমিয়ে রাখা অর্থ ব্যয় করছেন মানবতার সেবায়।

শিরিন-জিয়া দম্পতির মহানুভবতায় মানবতার জয় হয়েছে। ভারতে গিয়ে নিজেদের চিকিৎসা করাবেন এ উদ্দেশে জমিয়েছিলেন টাকা। কিন্তু, জমানো সব টাকা বিলিয়ে দিলেন করোনাভাইরাস সংক্রমণে রোধে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষদের মাঝে।

অসহায় মানুষের খাবারের কথা মাথায় রেখেই তাদের এই ত্যাগ। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায়। ওই দম্পতিরা হলেন জিয়াউর রহমান এবং শিরিন আক্তার। তাদের বসবাস বাগাতিপাড়া পৌরসভার রেলগেট এলাকায়। নিজেদের জমিজমা না থাকায় রেলের জমিতে তাদের বসবাস। পেশায় জিয়াউর রহমান ঠিকাদারীর সহযোগী এবং শিরিন আক্তার আনসার-ভিডিপি’র পৌর ওয়ার্ড লিডার।

এলাকাবাসী জানায়, গত তিন দিন ধরে পৌর এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ছুটে চলেছেন এই দম্পতি। আর তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী।

বুধবার সকালে বাড়ি বাড়ি খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সময় কথা হয় এই দম্পতির সঙ্গে। তারা জানান, শিরিন আক্তার দীর্ঘ আট ব্ছর থেকে হার্ট, কিডনি এবং মেরুদন্ডের সমস্যায় ভুগছেন। খুব কষ্টে টাকা জোগার করে ভারতে তিনি চিকিৎসা নেন। এবারও তিনি টাকা জমিয়েছিলেন ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার জন্য। এরই মধ্যে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস দেশের মানুষকে আক্রান্ত করেছে। ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকার ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। তাছাড়া সীমান্ত বন্ধ হওয়ায় তারা চিকিৎসার জন্যে ভারতে যেতে পারেননি।

এদিকে, করোনা মোকাবিলার যুদ্ধে ঘরে থাকতে গিয়ে নিম্ন-আয়ের শ্রমজীবীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব অসহায় মানুষদের চাপা কান্না তাদেরকে আলোড়িত করেছে। তাই নিজেদের চিকিৎসার জন্য জমানো সব টাকা দিয়ে সমাজের এসব মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জিয়া-শিরিন দম্পতি। গত তিনদিন থেকে বাজার থেকে ৫ কেজি করে চাল ছাড়াও আলু, শাক-সবজি, তেল, সাবান ক্রয় করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অসহায় পরিবারের হাতে তুলে দিচ্ছেন।

তারা বলেন, তাদের নিজেদের জমিজমা নাই। তাই রেলের জমিতে ঘর নির্মাণ করে জীবন যাপন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তাদের দু’টি সন্তান। এক সন্তান হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে, আর বড় ছেলে রাজশাহী পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করছে।

চিকিৎসার অর্থ ব্যয় করে সহায়তা করছেন আপনার চিকিৎসার কী হবে জানতে চাইলে শিরিন আক্তার বলেন, মানুষের জন্যই মানুষ। মানবতা সবার আগে, এরপর অন্য কিছু। নিজেরা পেটপুরে খেয়ে শান্তিতে থাকবো আর ওসব অসহায় মানুষেরা না খেয়ে কষ্ট করবে, তা হয় না। এমন অনুভব থেকেই নিজেদের যা আছে তাই দিয়ে মানুষের সহযোগিতা করছি। তিনি আরও বলেন, আগে মানুষ বাচুক, পরে চিকিৎসা হবে।

আরও পড়ুন