বিবিধ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য

কানের কাছেই কেন ঘুরপাক খায় মশা? 

Md. Riad Hossain

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ৪ঠা মে ২০২২ ০৪:৩০:৩৭ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ঘর থেকে বাইরে, বাগান থেকে রেস্টুরেন্ট সর্বত্রই বিনা আমন্ত্রণে গুণ গুণ গান শোনাতে হাজির হয়ে যায় তারা। কিন্তু জানেন কি? কেন সব স্থান ছেড়ে ঠিক কানে বা মাথার আশেপাশেই সমানে ঘুরপাক খেতে থাকে এই মশা?

মশা এমন এক উপদ্রপ যা বোধহয় স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে সকলেরই কোনও না কোনও সময় মাথাব্যথার কারণ হয়। দুপুরের ভাত ঘুম হোক কিংবা রাতের তৃপ্তির নিদ্রা, মশার ঘ্যানঘ্যানানি আর কামড়ে মাটি হয় প্রায়ই। এমনকি প্রিয় মানুষের সঙ্গে একান্তেও নিস্তার নেই মশার ভোঁ ভোঁ থেকে। মুহূর্তে বিগড়ে যায় মুড। 

কিন্তু জানেন কি? কেন সব স্থান ছেড়ে ঠিক কানে বা মাথার আশেপাশেই সমানে ঘুরপাক খেতে থাকে এই মশা? আর মশা কি সত্যিই গুণ গুণ করে ডাকতে পারে নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য রহস্য? এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বেরিয়ে আসবে অদ্ভুত সব বিজ্ঞানের অলিগলি যা হয়তো অনেকেরই অজানা। 

গ্রীষ্ম ও বৃষ্টির দিনে মশার প্রকোপ বাড়ে, আবার অনেক সময় শীতকালেও মশা কামড়াতে থাকে। মশার কামড়ে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার মতো অনেক বিপজ্জনক রোগের জন্ম হয়। অ্যানোফিলিস, কিউলেক্স, এডিস, হেমাগোগাস, এই কয়েক প্রজাতির মশা থাকলেও আমাদের দেহে সাধারণত কামড়ায় 'অ্যানোফিলিস' প্রজাতির স্ত্রী মশা। 'কিউলেক্স' প্রজাতির মশা আকারে বড় হয়। তাদের মাঝেমধ্যে বাড়ির দেওয়ালে বসে থাকতে দেখা গেলেও তারা রক্ত খায় না। তারা মূলত নিরামিষাশী। অর্থাৎ গাছের পাতার রস বা ফুলের রেনু থেকে তারা তাদের পুষ্টি সঞ্চয় করে।

নিশ্চই লক্ষ্য করেছেন যে হামেশাই এসে মাথার উপর মশা ঘুরতে শুরু করে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে সমস্ত মশা মাথার উপর ঘোরাফেরা করে তা মূলত মানুষকে কামড়ায় না। পুরুষ এবং মহিলা উভয় মশাই মানুষের মাথার উপর ঘোরাফেরা করে, তবে কেবল স্ত্রী মশাই মানুষের রক্ত ​​চুষে খায়।

এখন প্রশ্ন হল পুরুষ মশা যদি কামড়ায় না, তাহলে মানুষের মাথায় ঘোরাফেরা করে কেন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ তথা সব প্রাণীদের শরীর থেকে নির্গত হওয়া কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের প্রতি আকৃষ্ট হয় এই মশা। এই কার্বন ডাই অক্সাইডের কারণে ১০ মিটার দূর থেকে মশারা বুঝতে পারে যে সেই প্রাণীর অবস্থান কোথায়।

মূলত কোনও স্থানে মানুষ আছে তা মশা জানতে পারে মানুষের দেহের তাপমাত্রা, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ও ঘামের বা গায়ের গন্ধ থেকে। মাথা বা কানের কাছে মশা ঘোরার প্রধান কারণ নাক থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড সবথেকে বেশি পরিমানে বাতাসে থাকে নাকের ঠিক পিছনদিকে। অর্থাৎ কানের কাছে বা মাথার পিছন দিকে। তাই এই দুটি স্থানেই মশা সবথেকে বেশি উড়ে বেড়ায়। অনেকেই চুলে হেয়ার জেল লাগান। মশারা নাকি এই জেলের সুবাস খুব পছন্দ করে। হেয়ার জেলের ঘ্রাণ পেলেই মশা মাথার চারপাশে ঘুরতে থাকে।

চমকের বিষয় হল চোখ না থেকেও খাদ্যের কাছে পৌঁছে যায় মশা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থোপোডা প্রজাতির ডিপথেরা বর্গের এই পতঙ্গের চোখ নেই, কিন্তু আছে লক্ষাধিক পুঞ্জাক্ষি সম্মিলিত দর্শন ক্ষমতা। অর্থাৎ অপটিক ভিশন ছাড়াই বস্তুর সঠিক অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষমতা রয়েছে এই মশাদের।

মশার ডাক আসলে কী জানেন? মশার একটানা ঘ্যানঘ্যানানি আর সেই নাগাড়ে গুণ গুণ আওয়াজ কারোরই পছন্দ নয়। কিন্তু আদতে বাস্তব হল, মশা আসলে ডাকতে বা আওয়াজ করতে পারে না। মশার ভোঁ-ভোঁ আওয়াজ হল তার ডানার ঝটপটানির আওয়াজ। শুনলে চোখ কপালে উঠবে এই তথ্যেও। মশারা তিন সেকেন্ডে ডানা প্রায় ৯০ হাজার বার ঝাপটা দেয়। আর এই ঝাপটার জন্যই ওই একনাগাড়ে গুনগুনানি সহ্য করতে হয় মশার কামড়ের সঙ্গে।

আরও পড়ুন