জেলার সংবাদ, রিপোর্টার্স ডায়েরি

খবরের আগের খবর!

এম জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০১:১৩:৫৫ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বৃহস্পতিবার সকালে কলারোয়ায় গেলাম। কলারোয়ার চন্দনপুর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর ঘর নির্মাণ সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় বন্ধ হয়ে আছে এবং সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রাজপুর গ্রামে পুরাতন ব্যারাক ভেঙে ঘর নির্মাণে নানা জটিলতার খবর সংগ্রহ করতে।

বেলা ১২টার দিকে পৌঁছালাম প্রথমে চন্দনপুর ইউনিয়নের চান্দুড়িয়া গ্রামে। সেখানের ৩০ শতক জমি ৯৯ বছরের বন্দোবস্ত দেয়া আছে ওই গ্রামের শাহাজান আলীর নামে। কিন্তু তার নামের বন্দোবস্ত বাতিল না করেই সেখানে নির্মাণ হচ্ছে 'জমি নাই ঘর নাই' প্রকল্পের ১৫টি ঘর।

ঘরের জানালা পর্যন্ত ইতোমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। কিন্তু আন্তর্জাতিক সীমানার আইন অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোন পাকা প্রাচীর নির্মাণ কাজ না করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। ফলে সেদেশের বিএসএফ’র বরাত দিয়ে বিজিবি কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে আদৌ ঘর নির্মাণ করা হবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।

অভিযোগ রয়েছে, কলারোয়ার ইউএনও মৌসুমী জেরিন কান্তা ও সেখানের এসিল্যান্ড যৌথভাবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে না নিয়েই ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এখন সরকারের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরুপ এর দায় কার? পাশাপাশি ঘর দেয়ার নামে আর্থিক নানা সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ তো আছেই। ঘটনাস্থল থেকে চলে এলাম চান্দনপুর ইউনিয়ন পরিষদে। পাওয়া গেলনা চেয়ারম্যানকে। ফোনে কথা বললে তিনি জানান কলারোয়াতে আছেন।

সেখান থেকে গেলাম সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রাজপুর গ্রামে। সেখানের পুরাতন ব্যারাক ভেঙে নতুন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য কাজ শুরু হয়েছে। ভিতের কাজ সম্পন্ন। তবে নতুন পুরাতন ইট দিয়েই চলছে। ফলে ভেঙে দিয়েছে এলাকাবাসী। অভিযোগ রয়েছে, কলারোয়ার ইউএনও মৌসুমী জেরিন কান্তা ও এসিল্যান্ড, রাজমিস্ত্রী সুভাস দাসকে অফিসে ডেকে ব্যারাক ভেঙে ঘর নির্মাণের নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক সুভাস মিস্ত্রি কাজ শুরু করলে বর্তমানে স্থানীয়দের চাপের মুখে কর্তৃপক্ষ।

সেখানেও পেলাম না সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে। ফেরার পালা কলারোয়ায়। দুপুরে উপজেলা পরিষদে এসে প্রথমে গেলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী জেরিন কান্তার রুমে। তিনি বললেন, কোন ধরনের তথ্য দেয়া যাবে না বা ক্যামেরায় কথা বলা যাবেনা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

বিষয়টি সেখানে দাঁড়িয়ে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালকে জানালাম। তিনি বললেন, কলারোয়ায় কি হচ্ছে আমি জানি। দেখছি কি করা যায়। বিষয়টি নিয়ে আরো একটি তদন্ত কমিটি করা হবে।

এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর রুমে গেলাম। তিনি প্রকাশ্যেই অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র ক্যামেরায় তুলে ধরে ধুয়ে দিলেন কলারোয়া উপজেলা প্রশাসনের।

তারপর গেলাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুলতানা জাহান এর রুমে। তিনি প্রথমে বললেন, উপজেলা প্রশাসন বক্তব্য দিতে নিষেধ করে দিয়েছেন। আমি বক্তব্য দিতে পারবো না। আমরা ক্যামেরাসহ ভবনের নিচে চলে আসলাম। এরপর তিনি ডাক দিয়ে বললেন, বক্তব্য দেব আসেন। ফের তার রুমে গেলাম ক্যামেরায় বললেন, কলারোয়াতে অনেক ঘর নির্মাণ হচ্ছে এবং হয়েছে। এরমধ্যে আমার দপ্তর থেকে ৩০টি ঘরের বরাদ্দ আমি জানি এবং নিজ হাতে কাজ শেষ করেছি। এরপর আর কত ঘরের বরাদ্দ এসেছে তা বলতে পারবো না। কারণ খাস জমি সিলেকশান ও উপকারভোগী সিলেকশান কলারোয়ার দুই কর্তাই করছেন। একই সাথে মিস্ত্রি নিয়ে কাজও করছেন। ক্ষোভের সাথেই বললেন, আবার আমি খাতা কলমে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব।

এরই মধ্যে টেলিফোনে খবর পাচ্ছি সোনাবাড়িয়ার চেয়ারম্যান সুভাস মিস্ত্রিকে বাড়ি থেকে ধরে এনে একাধিক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। আমি খবর পেয়ে সোনাবাড়িয়ার চেয়ারম্যানকে ফোনে ঘটনাটি জানতে চাইলে বললেন, না এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। তাও আবার কাউকে বলতে নিষেধ করেছেন। আমরা সুভাস মিস্ত্রির সাথে দেখা করে ক্যামেরায় কথা বলার জন্য জানালে তিনি বলেন, স্যারেরা কারো সাথে কিছু বলতে নিষেধ করেছেন।

এরপর সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। মাধবকাটি বাজার পার হওয়ার পর ফোন বাজতে শুরু হলো। ড্রাইভিং করার কারণে ধরতে দেরি হলো। তারপরও বার বার ফোন বাজায় রিসিভ করলাম। দেখলাম কলারোয়ার সাংবাদিক জুলফিকার আলী ফোন দিলেন। আমি ধরলাম। উনি বললেন, কলারোয়ায় কষ্ট করে এসেছেন তাই খাওয়া দাওয়ার জন্য আপনার একটা খাম ছিলো। কি খাম, খামে কি আছে জানতে চাইলে বললেন, ফোনে সব কথা বলা ঠিক হবে না। তাই দেখা হলে খামটা দিতাম। আমি প্রশ্ন করলাম, এর আগে আমাকে কতবার খাম দিয়েছেন, আর আমি কলারোয়ায় এসেছি খাওয়ার পয়সা পকেটে করেই এসেছি। এত দায়িত্ব পালন করা লাগবে না। তবে আমাকে দেয়ার জন্য তার কাছে খামটি কে দিয়েছে জিজ্ঞাসা করলেও তিনি বললেন না।

বিষয়টি প্রথম কথাতেই বুঝতে পেরে রেকর্ডে নিলাম। এরপর রেকর্ডটি তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক এর হোয়াটস অ্যাপে দিলাম। আমি জানি না তিনি রেকর্ডটি শুনেছেন কি না? তবে শোনা বা না শোনা তাতে কলারোয়ার প্রশাসনের কিছু এসে যায় না। কারণ খবর সংগ্রহ করতে যেয়ে সেখানে যেন কোন আলাদা প্রশাসক দিয়ে চলছে সেটাই মনে হয়েছে। বর্তমান সময়ে কলারোয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ঘর নির্মাণ নিয়ে গণমাধ্যমে বেশ বড় বড় খবর হচ্ছে। তাতে কিন্তু থেমে নেই প্রাচীন ইতিহাস সেই দুর্নীতি। বরং নতুন কৌশলে কিভাবে দুর্নীতি করা যাবে। যাদের জন্য দোচালা ঘর হচ্ছে। তাদের সেই দোচালার ঘর থেকে দোতলায় থাকা কর্তারা কিভাবে পকেট ভরবে তা নিয়ে চলছে দফায় দফায় কলারোয়ার মাথাওয়ালাদের নিয়ে বৈঠক।

এখন থেকে সাতক্ষীরার কোন সাংবাদিক কলারোয়ায় গেলে তার খাওয়া দাওয়া আসা যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন উক্ত সাংবাদিক সাহেব। সাংবাদিকদের জন্য এ ধরনের আয়োজন বেশ ভালো লেগেছে, এভাবেই চালিয়ে যান সাংবাদিক সাহেব। ধন্যবাদ আপনাকে। (মুল খবর পরে----)

আরও পড়ুন