বিনোদন, ঢালিউড, টেলিভিশন

নায়ক থেকে খলনায়ক যারা

কামরুল ইসলাম

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২০ ১০:২৮:২২ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বাংলা সিনেমায় তাহারা নায়ক হয়ে পর্দায় উপস্থিত হয়েছিলেন। পরে হয়ে গেলেন দেশ সেরা খলনায়ক। পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। নায়ক থেকে খলনায়ক কেমন করে হলেন?

পর্দা নায়ককে কত বাহবা দেওয়া হয়, অন্যদিকে খলনায়ককে দেওয়া হয় গালি। কে চায় গালি শুনতে, দর্শকের চোখে মন্দ মানুষ হতে। তবে সময় বদলেছে, বদলেছে দর্শকের মনোভাব। এখকার দর্শকের কাছে চরিত্রই প্রধান। ভিলেন মানে খারাপ কিছু নয়। কে কোন চরিত্রে অভিনয় করল, কেমন ফুটিয়ে তুলল হালহামলের দর্শকরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন।

বাংলা সিনেমায় এমন কিছু সংখ্যক অভিনেতা আছে যারা খলনায়ক হয়ে পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। তবে মজার বিষয় হল, দেশ সেরা এই খলনায়কেরা কিন্তু নায়ক হয়ে পর্দায় অভিষিক্ত হয়েছিলেন। আজ তাদের একাংশের গল্প বলবো।

১. রাজীব- অনেকেই বলে, বাংলা সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী ভিলেনের নাম রাজীব। তার বচন, সংলাপ আর অভিনয় গুনে তিনি ছিলেন বাংলা সিনেমা সময়ের সেরা ভিলেন। তার বাঘের মতো সংলাপ পর্দায় কাঁপন ধরাতো। তার ভযংকর সব অঙ্গভঙ্গির ভয় দেখিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়েছেন এ দেশের বহু মা। সিনেমায় কুটবুদ্ধি, প্রতিপক্ষকে শক্তিশালী মোকাবিলায় ঘায়েল করতে জুড়ি ছিলো না তার। অভিনয়ে যেমন ছিলেন দুর্দান্ত, তেমনি তার বাচনভঙ্গি, এক্সপ্রেশনও ছিলো যে কোনো অভিনেতার জন্য ঈর্ষনীয়।

ভিলেন হয়ে তুুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। অথচ মজার ব্যাপার হলো ঢালিউডে তার আগমন ঘটেছিলো নায়ক হিসেবে। ১৯৮১ সালে ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ ছবিতে প্রথম তিনি নায়ক হয়ে অভিনয় করেন। তবে তিনি তারকাখ্যাতি পান কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘খোকনসোনা’ ছবিতে অভিনয় করে।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে রাজীব চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার ভূমিকায়। ‘হীরামতি’ ছবি দিয়ে ১৯৮৮ সালে প্রথম পুরস্কার ঘরে তুলেন তিনি। এরপর ১৯৯১ সালে ‘দাঙ্গা’, ২০০০ সালে ‘বিদ্রোহ চারিদিকে’, ২০০৩ সালে ‘সাহসী মানুষ চাই’ ছবির জন্য পুরস্কার পান।

২.মিশা সওদাগর- এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিলেন পুরান ঢাকার এক চিরতরুণ। নির্বাচিত হন নায়ক হিসেবে। ১৯৮৯ সালে ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘চেতনা’ ছবিতে নায়ক হয়ে অভিষেক হওয়া সেই তরুণের বাংলা সিনেমার সবচেয়ে প্রভাবশালী খলনায়ক মিশা সওদাগর। ‘অমরসঙ্গী’ সিনেমায় তিনি ছিলেন নায়ক।

হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় দেখে নায়ক হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় তার,  নায়ক থেকে হয়ে গেলেন খলনায়ক। ‘আশা ভালোবাসা’ খলনায়ক মিশার প্রথম ছবি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ঢাকাই ছবির অনবদ্য এ অভিনেতাকে।

গেল ৩০ বছরে প্রায় মিশা সওদাগর  ৯০০'র বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। বাংলা চলচ্চিত্রে ভিলেন হিসেবে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন মিশা সওদাগর।

৩. সাদেক বাচ্চু- সাদেক বাচ্চুর আসল নাম মাহবুব আহমেদ সাদেক। চাঁদপুরে দেশের বাড়ি হলেও জন্ম ঢাকায়। সিনেমার কিংবদন্তি মানুষ এহতেশাম 'চাঁদনী' চলচ্চিত্রে তার নাম বদলে সাদেক বাচ্চু করে দেন। সেই থেকেই তিনি এ নামে পরিচিত।

সাদেক বাচ্চু ঢালিউডের খলনায়ক হিসেবে সমাদৃত তবে কিন্তু তিনি নায়ক হয়েই বড় পর্দায় উপস্থিত হয়েছিলেন। ১৯৮৫ সালে রামের সুমতি চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় বড় পর্দায় অভিষিক্ত হন। আরও একটি চলচ্চিত্রেও সুনেত্রার বিপরীতে নায়ক চরিত্রে ছিলেন কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি।

সুখের সন্ধানে চলচ্চিত্র দিয়ে খল চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এরপর থেকে খল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অধিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। নব্বই দশকে এহতেশামের ‘চাঁদনী’ ছবিতে অভিনয়ের পর জনপ্রিয়তা পান খলনায়ক হিসেবে। এই পরিচয়েই দেশজুড়ে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সাদেক বাচ্চুর।

এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অভিনয় জীবনের সর্বোচ্চ অর্জন হিসেবে ২০১৮ সালে 'একটি সিনেমার গল্প' চলচ্চিত্রে খলচরিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

৪. বাবর- বর্তমান দর্শকরা তাকে খুব একটা নামে চিনেন না। তবে বাংলা সিনেমার সোনালী যুগের দর্শকরা রংবাজ সিনেমার ভিলেন বাবর কে ভুলবেন না। খলনায়ক হিসেবে পরিচিত বাবরের শুরুটা ছিল কিন্তু নায়ক হিসাবেই। আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘বাংলার মুখ’ নামক ছবিতে তিনি প্রথম নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। তখন বেশ নাম ও কুড়ান কিন্তু হঠাৎই নায়কের পাঠ ছেড়ে খলনায়কের অভিনয়ে মনোনিবেশ করেন তিনি।

নায়ক রাজ রাজ্জাকের প্রযোজিত এবং জহিরুল হক পরিচালিত ছবি ‘রংবাজ’ এর মধ্যে দিয়ে তিনি খলনায়ক হিসেবে নিজেকে দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করেন। রংবাজ ছবিটির পরই যেন সব পাল্টে যায়। এখন ছবিগুলোতে বাবরকে খলনায়কের ভূমিকায় দেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে থাকে দর্শকরা। বাবর প্রায় তিনশ’ ছবিতে অভিনয় করেন।

৫. ওমর সানী- ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা ওমর সানী। নব্বই দশকের শুরুতে চলচ্চিত্রে তার আগমন ঘটে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়ে। একজন রোমান্টিক হিরো হয়েই পর্দায় আসেন তিনি। এরপর তাকে দেখা গেছে নানামাত্রিক চরিত্রে।

১৯৯২ সালে নুর হোসেন বলাইর এই নিয়ে সংসার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র শিল্পে অভিষেক ঘটে। তবে তার প্রথম ছবি ‘চাঁদের আলো’ মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালে।  ১৯৯৪ সালে দিলীপ  বিশ্বাসের  দোলা  চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো মৌসুমীর বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি।

পরবর্তীতে ২০০৫ সালে শাকিব খান অভিনীত ওরা দালাল চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। খলনায়ক হিসেবেও ওমর সানী সফলতা পান।

আরও পড়ুন