পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে রিকশা প্রসঙ্গ এলেই ঢাকা শহর আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী কাঠামোর কারণে ঢাকাকে বিশ্বের রিকশার নগরী বলা হয়। গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ২০১৪ সালের ২২শে নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকাকে রিকশার নগরী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই চোখে পড়ে তিন চাকার বাহন রিকশা। রিকশা আবিষ্কারের সঠিক ইতিহাস নিয়ে মতভেদ রয়েছে। গবেষকদের কেউ কেউ বলেছেন, এ বাহনটির উদ্ভব হয়েছে জাপানে। আবার, কারও মতে এটি তৈরি করেছেন মার্কিনীরা।
‘রিকশা’ শব্দটি এসেছে জাপানি ‘জিন্ রিকিশা’ শব্দ থেকে। যেখানে জিন অর্থ মানুষ, রিকি অর্থ শক্তি এবং শা অর্থ বাহন। অর্থাৎ রিকশার আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় মানুষের শক্তিতে চলা বাহন বা মানুষ চালিত বাহন।
গবেষক এম উইলিয়াম স্টিলির ‘রিকশা ইন সাউথ এশিয়া, ইন্ট্রোডাকশন টু স্পেশাল সেকশন’ গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ১৮৬৯ সালের দিকে জাপানে কাহার-টানা পালকির বিকল্প হিসেবে এই হাতে টানা রিকশার উদ্ভব হয়। দেশটির মিজি সাম্রাজ্যের শাসনামলে এই রিকশা তৈরির কাজ শুরু হয়। শুরুর দিকে কেবল ভারী মালপত্র বহনের ক্ষেত্রে রিকশা ব্যবহার হতো। পরে ১৮৭০ সালের দিকে এটি মানুষের চলাফেরার জনপ্রিয় বাহন হয়ে ওঠে।
উইলিয়াম স্টিলির গবেষণা অনুযায়ী ১৮৭৫ সাল নাগাদ জাপানে রিকশার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর এসব রিকশা ১৮৭৩ সালে চীনে, ১৮৭৪ সালে হংকং ও ১৮৮০ সালে সিঙ্গাপুরে ছড়িয়ে পড়ে। মুনতাসির মামুনের ‘স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী ঢাকা’ বইতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্যাডেল চালিত যে রিকশার প্রচলন, সেটা সিঙ্গাপুর থেকে এসেছে।
বর্তমানে, বাংলাদেশে যেসব রিকশা চলতে দেখা যায় সেগুলোর বেশিরভাগই প্যাডেল চালিত। সম্প্রতি রিকশাচালকদের কষ্ট লাঘবে রিকশায় ব্যাটারি সংযোজন করা হয়েছে। এ ধরনের রিকশায় চালক শুধু হ্যান্ডল ধরে বসে থাকেন। আর এতে সংযুক্ত মোটর শক্তি বাহনটিকে টেনে নিয়ে যায়।
যুগের চাহিদা ও প্রযু্ক্তির উন্নয়নে নিত্য নতুন বাহন আবিষ্কার হলেও রিকশার আবেদন একটুও কমেনি। ঐহিত্যবাহী এই বাহনকে টিকিয়ে রাখতে মহাসড়কের পাশাপাশি রিকশা লেনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।