বাংলাদেশ, জেলার সংবাদ

ঝিনাইদহে লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই ছলছে ক্লিনিক ও ল্যাব,তদন্ত করতে আদালতের আদেশ জারি

ডিবিসি নিউজ ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ২৭শে নভেম্বর ২০২০ ০৯:০৪:২৪ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ঝিনাইদহে ১৬৯ ক্লিনিক ও ল্যাব লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই ছলছে শিরোনামে ডিবিসি নিউজে সংবাদ প্রকাশতি হওয়ার পর তা তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে ঝিনাইদহের একটি আদালত । গত ২৫শে নভেম্বর বুধবার ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাস  স্বপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ জারি করেন।

আদেশে বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ (১) (সি) ধারার বিধান মোতাবেক ডিবিসি নিউজে বগত ২৩শে আগস্ট প্রকাশিত ঝিনাইদহে ১৬৯ ক্লিনিক ও ল্যাব লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই ছলছে শিরোনামে সংবাদটি আমলে নেয়া হলো। আদেশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঝিনাইদহ সার্কেল তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়। এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তদন্তকালে যাবতীয় তথ্য ও দালিলিক সাক্ষ্য প্রমান সরবরাহ করতে সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ২৪শে ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার দিন ধার্য করা হয়েছে।

আদেশের অনুলিপি বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ঝিনাইদহ, উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক, খুলনা রেঞ্জ, খুলনা, পুলিশ সুপার ঝিনাইদহ, সিভিল সার্জন ঝিনাইদহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ঝিনাইদহ সার্কেল, ঝিনাইদহ এবং ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্ট  অপর ২টি পত্রিকার প্রতিনিধি বরাবর পাঠানো হয়েছে।

আদেশে আরো বলা হয়েছে,উল্লেখিত সংবাদ অনুযায়ী ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন ক্লিনিকগুলোতে মালিক পক্ষের লোকজনের চিকিৎসক-নার্স সেজে ভুল চিকিৎসা দেন মর্মে অভিযোগ আছে। উল্লেখিত সংবাদ সত্য হলে তাতে যেমন বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ২২ ও ২৮ ধারায় বর্ণিত অপরাধের অস্তিত্ব রয়েছে তেমনি তা ঝিনাইদহবাসীর আইনগত ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল মর্মে প্রতীয়মান হয়। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তের আবশ্যকতা রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা নিম্নোক্ত নির্দেশনা অনুসরণ করবেন। বিজ্ঞ আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ৫টি নির্দেশনা দিয়েছেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবিসি নিউজ,দৈনিক নবচিত্র এবং দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন, ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও সূচীপত্র প্রস্তুুত এবং সাক্ষীদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করবেন। ঘটনাস্থলের স্থিরচিত্র ধারণপূর্বক প্রিন্ট করে ডকেটের সাথে সংযুক্ত ও আলামত প্রাপ্ত হলে জব্দ ও কোন ক্লিনিকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কোনো রোগী মারা গেলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা সহ যতদূর সম্ভব ভুক্তভোগী রোগী তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যাক্তিদের সাক্ষী হিসেবে নির্বাচন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত ডিবিসি নিউজের অনলাইন সহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয় ঝিনাইদহ জেলার বেশিরভাগ ক্লিনিক লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই মাসের পর মাস ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ের ক্লিনিকগুলোতে অহরহ অপচিকিৎসা চলছে। ডাক্তারের অবহেলায় প্রসুতির মৃত্যু ঘটছে। ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসার উন্নত পরিবেশ নেই। নেই সর্বক্ষন চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত র্নাস। ১০ বেডের পরিবর্তে শয্যা বাড়িয়ে ৫০/৬০ জন করে রোগী ভর্তি করা হয়। নীতিমালা ভঙ্গ করার পরও এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টার নতুন লাইসেন্স পাচ্ছে। পুরানো লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস থেকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় মোট ক্লিনিক ও ডায়াগনেস্টিক সেন্টরের সংখ্যা ১৬৯টি। এর মধ্যে ক্লিনিক রয়েছে ৮১টি। সুত্রমতে জেলার কোটচাঁদপুরের একটি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন আছে। বাকী  ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন নেই।

এছাড়া ৮৯টি ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের কোনটার লাইসেন্স ২০১৮ সাল থেকে নবায়ন করা হয়নি। সদর উপজেলার ডাকবাংলা, বৈডাঙ্গা, সাধুহাটী, বরোবাজার, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, শৈলকুপা, হরিণাকুন্ডু, মহেশপুরের নেপারমোড় ও খালিশপুরের ক্লিনিকগুলোতে সর্বক্ষন ডাক্তার থাকে না। ক্লিনিক মালিক, ছেলে. স্ত্রী ও মেয়োরাই কোন কোন ক্লিনিকের স্টাফ সেজে কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অপারেশন থিয়েটার ও রোগীর শয্যা রুমে নোংরা পরিবেশ বিরাজ করে। নেই দক্ষ নার্স। ফলে রোগীরা বিপদে পড়লে তেমন কোন সহায়তা পান না। ফলে প্রায় এ সব ক্লিনিকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন