করোনার দুই ডোজ টিকা নিয়েও সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলের মৃত্যুর পর টিকার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল করোনা দুই ডোজ টিকা নিয়েছিলেন। এরপরও করোনা জটিলতায় সোমবার তার মৃত্যুর খবর জানিয়েছে তার পরিবার।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করোনার ফুল ডোজ টিকা নেওয়ার পরও করোনায় কলিন পাওয়েলের মৃত্যুর সংবাদ টিকাবিরোধীদের নতুন করে উৎসাহ যোগাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
প্রতিবেদনে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলকেন ইনস্টিটিউট স্কুল অব পাবলিক হেলথের স্বাস্থ্যনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. লীনা ওয়েন বলেন, 'করোনার টিকা পুরোপুরি কার্যকর। বিশেষ করে, রোগের তীব্রতা কমাতে ও অসুস্থতা দূর করতে এটি খুবই কার্যকর।'
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য অনুযায়ী, টিকা দেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৬ গুণ ও মৃত্যুর ঝুঁকি ১১ গুণ কমে যায়। এর মানে, যে ব্যক্তি টিকা নেননি তার তুলনায় টিকা নেওয়া ব্যক্তির করোনায় আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর ঝুঁকি উভয়ই কমে যায়।
তবে, করোনার টিকা কাউকেই শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না। এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত কোনো টিকাই শতভাগ তা পারে না। শুধু তাই নয়, প্রকৃতপক্ষে কোনো চিকিৎসাই একজন রোগীকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না। এর মানে এ নয় যে টিকা অকার্যকর বা টিকা নেওয়া উচিত নয়।'
কলিন পাওয়েলের বয়স ছিল ৮৪ বছর। ব্লাড ক্যানসারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
ড. লীনা ওয়েন বলেন, 'শারীরিক জটিলতায় ভোগা বয়স্ক ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন। এ ধরনের রোগীরা খুবই ঝুঁকিতে থাকেন। কলিন পাওয়েল এমনই একজন রোগী ছিলেন। তার বয়স ও শারীরিক জটিলতা ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছিল।' লীনা মনে করেন, জটিল রোগে ভোগা বয়স্ক ব্যক্তিদের করোনা টিকার বুস্টার ডোজ বা তৃতীয় ডোজ দেওয়া যেতে পারে। কেননা, এটি তাদের বাড়তি সুরক্ষা দেবে।
'রেইনকোট'কে উপমা হিসেবে উল্লেখ করে ড. লীনা ওয়েন বলেন, 'হালকা বৃষ্টিতে এটি বেশ ভালো কাজে দেবে। যদি মুষলধারে বৃষ্টি হয় বা ঘূর্ণিঝড় আসে তাহলে ভিজে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে বলা যাবে না যে রেইনকোট কার্যকর নয়।'
'দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সবসময় শুধু রেইনকোটই কাউকে পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারে না,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'শরীরে নানা প্রকার ভাইরাস আক্রমণ করলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এর জন্যে টিকার ওপর দোষ চাপানো ঠিক না।'
'তাই যত মানুষকে সম্ভব টিকা দিতে হবে। এর ফলে সংক্রমণের হার কমে যাবে এবং সবাইকে সুরক্ষা দেওয়া যাবে। জনবহুল স্থানে মাস্ক পরা থাকলেও বাড়তি সুরক্ষা পাওয়া যায়।'
ড. লীনা আরো বলেন, জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, দেখতে হবে টিকা কতজনকে সুরক্ষা দিয়েছে। কতজনকে সুরক্ষা দিতে পারেনি তা নয়।
আসল কথা হচ্ছে, টিকা কার্যকর। টিকা একইসঙ্গে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমায়। তবে টিকা শতভাগ সুরক্ষা দেয় না। কারণ, কোনো চিকিৎসাই কাউকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না।