জেলার সংবাদ, কৃষি

ঠাকুরগাঁওয়ে গরুর বদলে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ২১শে জানুয়ারী ২০২২ ০৬:৫৮:২১ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

একটা সময় ছিল যখন গরু আর মহিষ দিয়েই হালচাষ করা হতো। আর অন্য কোন উপায়ও ছিলো না হালচাষ করার মতো। কালের বিবর্তনের সঙ্গে চাষাবাদেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। এখন পশু দিয়ে চাষাবাদ না করে যান্ত্রিক নানা প্রযুক্তির সাহায্যে চাষাবাদ করে থাকে কৃষকরা। কিন্তু ভিন্ন চিত্র দেখা গেল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ধন্দোগাঁও গ্রামে।

মানুষের বাহন হিসেবে ঘোড়ার ব্যবহার নতুন নয়। আবার পণ্য বা মালামাল টানতেও ব্যবহার করা হয় ঘোড়ার গাড়ি। যদিও কালের পরিক্রমায় এগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। কিন্তু ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষের দৃশ্য বিরল! আধুনিকতার চরম উৎকর্ষের এই যুগে বাস্তবেই ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ধন্দোগাঁও গ্রামের কৃষক ভূষণ চন্দ্র। তার এই হালচাষের কাজে সহযোগিতা করছেন স্ত্রী ভানু রাণী।

ভূষণ চন্দ্র বলেন, প্রায় এক বছর ধরে ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করে আসছি। আমি একজন প্রান্তিক কৃষক। বর্তমান বাজারে গরুর দাম অনেক বেশি। এক জোড়া হালের গরু কিনতে গেলে খরচ পড়ে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এই টাকা দিয়ে ছয় জোড়া ঘোড়া কেনা যায়। ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকাতেই এক জোড়া ঘোড়া মেলে।

তিনি আরও বলেন, আগে হালের গরু ছিল, এখন নেই। বাজারে গরুর দাম বেশি হওয়ায় কেনার সামর্থ্যও নেই। তাই নিজের চাষাবাদের প্রয়োজনে বাজার থেকে গরুর বদলে ২২ হাজার টাকা দিয়ে দুটি ঘোড়া কিনেছি। শুধু নিজের জমিতে চাষাবাদ করছি না, অন্যের জমিতেও টাকার বিনিময়ে চাষ করে দিচ্ছি। এক বিঘা জমি চাষ দিতে নিচ্ছি ৫০০ টাকা। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই বিঘা জমিতে হালচাষ করা যায়।

ভূষণের স্ত্রী ভানু রাণী বলেন, প্রথম দিকে ঘোড়াগুলোকে হালের কসরত শেখাতে অনেক কষ্ট হয়েছে তাদের। ঘোড়ায় লাঙল-জোয়াল জুড়ে দিয়ে অনেকবার চেষ্টার পর আয়ত্তে আসে। এখন পুরোদমে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন তারা।

ধন্দোগাঁও এলাকার কৃষক মনসুর আলী ও আব্দুল আজাদ বলেন, তাদের এলাকায় বড় কোনো গরু-মহিষ নাই। ভূষণের ঘোড়া দিয়েই তাদের জমিগুলোতে লাঙল দিতে হয়। এতে খরচও কম লাগে।

পার্শ্ববর্তী মাস্টারপাড়া এলাকার কৃষক ভূপেন চন্দ্র বলেন, ঘোড়া দিয়ে লাঙল দিলে জমি গভীরভাবে খনন হয়। পাওয়ারটিলার বা মাহেন্দ্র গাড়ি দিয়ে হালচাষ করলে জমি সমান হয় না। তাই ঘোড়ার হাল দিয়ে জমি সমান করছি। এতে পানি ধরে রাখা সহজ হয়।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, কৃষকেরা এখন যান্ত্রিক উপায়ে জমি চাষ করেন। ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করা অপ্রচলিত একটা বিষয়। কৃষি বিভাগ সব সময় আধুনিক মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে চাষাবাদ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে।

আরও পড়ুন