তেলের দাম কমালে পাওয়া যায় না ১৫ দিনেও, বাড়ালে মেলে ২ দিনেই।
সরকার যখন ভোজ্য তেলের দাম কমায়, তখন ১৫ দিনেও কোনো পর্যায়ে সেই কম দামের তেল মেলে না। অথচ দাম বাড়ানোর ২ দিনের মধ্যেই বাজারে চলে আসে বাড়তি দামের তেল। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, ১০ দিনেই ব্যবসায়ীরা অনৈতিকভাবে পকেটে ঢুকিয়েছে ১শ' ৫০ কোটি টাকার বেশি। সরকার ভোজ্য তেলের সংকট নিরসনে টিসিবির মাধ্যমে তেল আমদানির কথা জানালেও, তা কবে আসবে সেটি অনিশ্চিত।
সয়াবিন ও পাম তেলে স্থানীয় উৎপাদন ও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রেক্ষাপটে গত ২০শে মার্চ সয়াবিন তেলের দাম কমায় সরকার। বোতলজাত তেলে লিটারে ৮ টাকা এবং খোলা তেলে ৭ টাকা কমানো হয়। কিন্তু ১৫ দিনেও সেই কম দামের তেল মেলেনি বাজারে। ব্যবসায়ীদের যুক্তি ছিল বেশি দামে কেনা তেল কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে সরকারকে চাপে রাখে ব্যবসায়ীরা। রমজানে না বাড়ালেও ঈদের ছুটির পর ৫ই মার্চ সয়াবিন ও পাম তেলের দাম লিটারে ৩৮ থেকে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়। ৫ই মার্চের পর দুইদিন ছিল শুক্র ও শনিবার। অথচ রবিবার থেকেই বাড়তি দামের তেল চলে আসে বাজারে। খুচরা ব্যবসায়ীরাও বাড়তি দামেই আগের কেনা তেল বিক্রি শুরু করে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, মিলারদের কাছে ভোজ্য তেলের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও মার্চ মাস থেকেই বাজারে তেল সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয় তারা। কয়েকটি মিল ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে ৪ থেকে ৬হাজার মেট্রিকটন তেল কম সরবরাহ করে। ফলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয় ভোজ্য তেলের বাজারে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, তেলের ক্ষেত্রে আমরা এখন পর্যন্ত কোন সৎ ব্যবসায়ী খুঁজে পাইনি। আমরা যেখানেই এসবের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি দেখা গেছে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায়ীরাই এই কারচুপির সঙ্গে জড়িত।
কম দামে কেনা হলেও দাম বাড়বে এমন ঈঙ্গিতে ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই সয়াবিন তেল বিক্রি একরকম বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা। অবৈধভাবে মজুদ করে দশদিনেই বড় অংকের টাকা পকেটে ঢোকায় তারা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আমরা যদি ১০ দিনেরও হিসেব করি, তাহলে ১০ দিনে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। পার লিটারে তারা যদি ৪০ টাকা করে লাভ করে তাহলে কত পরিমান টাকা ভোক্তার পকেট থেকে চলে যাচ্ছে।
এদিকে ভোজ্য তেলের বাজারে অস্থিরতা কমাতে, টিসিবির মাধ্যমে সয়াবিন তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই তেল কবে আসবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও জুনমাসে আবারো এককোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীদের কমদামে তেল দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে টিসিবি।
রমজান মাসে ১১০ টাকা লিটারে টিসিবি তেল বিক্রি করলেও জুনে সে দামে বিক্রির সম্ভাবনা কম।