দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ অন্ধত্ব নিয়ে বসবাস করছেন। এই সংখ্যা কমানোর একমাত্র উপায় মরণোত্তর চক্ষুদান। মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দান করা চোখ দিয়ে একজন অন্ধলোক দেখতে পাবেন। এ কারণে মরণোত্তর চক্ষুদানে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়ানো দরকার।
মৃত্যুর পর চক্ষুদানকারী ব্যক্তির কেবল চোখের কর্নিয়া একজন অন্ধলোকের চোখে সংযোজন করা হয়। শারীরিকভাবে বেঁচে থাকার প্রকৃত স্বাদ পেতে শরীরের ইন্দ্রিয় সক্রিয় থাকা আবশ্যক। কোন একটি ইন্দ্রিয় কাজ না করলেই বিপত্তি।
এ অন্ধত্ব দূর করা খুবই সম্ভব যদি তা কর্নিয়াজনিত অন্ধত্ব হয়। এ মানুষগুলোর কেউ কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বে ভুগছেন, কেউ অন্য কোন মৃত ব্যক্তির দান করা চোখ দিয়ে দেখছেন। তারা জানান, 'এখন দেখতে পাই। আগে দেখতে পেতাম না। এখন স্কুলে যাই। আগে দেখতাম না। কর্নিয়া পরিবর্তনের পর এখন দেখি।'
'মরণোত্তর চক্ষুদান' এ আগ্রহী বা প্রতিশ্রুতি দেয়া ব্যক্তিরা চাইলেও তাদের কর্নিয়া অন্যের চোখে যোগ করা সম্ভব না, যদি না তাদের নিকট ব্যক্তিরা সেক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ নেন। মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলনে যুক্ত থাকারাই তা বলছেন। সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সভাপতি ডা. তোসাদ্দেক হোসেন সিদ্দিকী জানান, আমরা অসম্ভব সাড়া যাচ্ছি যুবকদের কাছ থেকে। কিন্তু তার চোখ আমার এখন কাজে লাগছে না। সেটা আমরা পাব তার মৃত্যুর পর। আমাদের পরিবারে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন যে সকল বয়োবৃদ্ধরা আছেন, তাদের চোখ দান করে, দুজন অন্ধ মানুষকে চোখে দেখার ব্যবস্থা যদি আমরা করি, তবে এই অন্ধত্ব নিবারণ সম্ভব।'
সঙ্গীতশিল্পী মেহরীন বলেন, হৃদয়বান একজন মানুষ হয়ে আমি মরনোত্তর চক্ষু দান করলাম। তবে আমার মৃত্যুর পর কিন্তু সেটা আমার আয়ত্বের বাইরে। এমন একজন উত্তরসূরিকে রেখে যেতে হবে, যে আমরা স্বপ্নের মর্ম বুঝবে। যে অপরের কল্যাণের ইচ্ছাটাকে বুঝবে।'
কর্নিয়াজনিত অন্ধত্বে ভোগা ব্যক্তিরা প্রতিদিন চক্ষু হাসপাতালগুলোতে কর্নিয়া পেতে আবেদন করে, এদের মধ্যে দরিদ্র-অসহায়রাই বেশি। সন্ধানী চক্ষু হাসপাতাল কর্নিয়া দেয়া-নেয়ার কাজটি সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। কর্নিয়া দিতে প্রতিশ্রুতি দেয়া মৃত ব্যক্তিদের কর্নিয়া সর্বোচ্চ ৬ ঘন্টার মধ্যে সংগ্রহের পর, নানান প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে থাকে। এরপর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে, কর্নিয়া প্রয়োজন এমন জীবিত ব্যক্তিদের চোখে যুক্ত করা হয়।
সন্ধানী চক্ষুব্যাংক স্থাপনের পর ১৯৮৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৯টি কর্নিয়া সংগ্রহ করা হয়েছে। সংযোজন করা হয়েছে ৩ হাজার ৪২৭টি। অন্যান্য চক্ষু হাসপাতাল ও চক্ষুদান সমিতি কর্নিয়া আমদানি করে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।