বাংলাদেশ, জেলার সংবাদ, অপরাধ, নারী

নুসরাত 'হত্যা মামলার' রায় আগামীকাল

মো. হামিদুর রহমান

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ২৩শে অক্টোবর ২০১৯ ০৮:২০:৩৩ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার রায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার।

ফেনী জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে রায় ঘোষণা হবে। বর্বরোচিত এই হত্যার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি স্বজনসহ সবার। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রায়কে ঘিরে পুরো জেলায় নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

চলতি বছরের ২৭শে মার্চ সকাল সাড়ে ১১টা। ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা। পিয়ন মোস্তফাকে দিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা নুসরাতকে ডেকে পাঠান তার অফিসকক্ষে। এসময় ২/৩ জন সহপাঠিকে নিয়ে যাওয়ায়, নুসরাতের উপর রেগে যান অধ্যক্ষ। পরে নুসরাতকে রেখে সহপাঠিদের রুম থেকে বের করে দেন সিরাজ। এসময় নুসরাতের ওপর যৌন নিপীড়ন চালান মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।   

বাড়িতে গিয়ে মাকে ঘটনাটি জানান নুসরাত, ২৭শে মার্চ দুপুরের পর তার মা শিরীন আক্তার নুসরাতকে নিয়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাছে যান বিষয়টি জানতে। নুসরাতের মা'র সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেন অধ্যক্ষ।  

পরে নুসরাত সোনাগাজী থানায় কয়েকজন সহপাঠিকে নিয়ে গেলে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন তার কক্ষে শুধু নুসরাতকে রেখে অন্যদেরকে পাশের কক্ষে বসতে বলেন। এসময় ওসি মোয়াজ্জেম তার মোবাইলে নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিওচিত্র ধারণ করেন; যাতে অবমাননাকর অনেক প্রসঙ্গ ছিলো।

পরে সন্ধ্যায় নুসরাতের মা আবার থানায় এসে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। এরপর রাতেই অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।  

এদিন অভিযোগ জানাতে এসে সোনাগাজী থানার মামলা তুলে নিতে নানাভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়। ৬ই এপ্রিল আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় তাকে অধ্যক্ষের অনুসারীরা কৌশলে পাশের সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়।

পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১০ই এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যালে নুসরাতের মৃত্যু হয়। হত্যা মামলা করেন নুসরাতের বড়ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

১৬ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়া হয়। মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে করা হয় ১ নম্বর হুকুমের আসামি। ২ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি নুর উদ্দিন, ৩ নম্বর আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম, ৪ নম্বর আসামি পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ, ৫ নম্বর এজহারভুক্ত আসামি সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, ৬ নম্বর আসামি জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন, ৭ নম্বর আসামি হাফেজ আব্দুল কাদের, শিক্ষক আবছার উদ্দিন ৮ নম্বর এজহারভুক্ত আসামি, ৯ নম্বর আসামি কামরুন নাহার মনি, ১০ নম্বর আসামি অধ্যক্ষের শালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি, ১১ নম্বর আসামি আবদুর রহিম শরিফ, ১২ নম্বর আসামি ইফতেখার উদ্দিন রানা, ১৩ নম্বর আসামি ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, ১৪ নম্বর আসামি সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাদ্রাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, ১৫ নম্বর আসামি মহিউদ্দিন শাকিল এবং ১৬ নম্বর আসামি মোহাম্মদ শামীম।

এদের মধ্যে দায় স্বীকার করেছেন ১২ জন। তাদের স্বীকারোক্তিতে বের হয়ে আসে নুসরাত হত্যার  বীভৎস্য বর্ণনা। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি নুসরাতের পরিবারের।

আসামিপক্ষের আইনজীবীর প্রত্যাশা, রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে, তাই খালাস পাবেন আসামিরা। অধ্যক্ষের নির্দেশে নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা আশা করছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী।

রায় ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণ, ফেনী সদর, সোনাগাজী ও নুসরাতের বাড়িতে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের রায়ের অপেক্ষায় ফেনীসহ পুরো দেশবাসী। সঠিক বিচারে আইনের শাসনে নজির স্থাপন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

আরও পড়ুন