আন্তর্জাতিক, বিবিধ, আমেরিকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য

প্রথমবারের মত মানুষের দেহে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন

Faruque

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ১১ই জানুয়ারী ২০২২ ১১:৪৬:৪০ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে প্রথমবারের মত মানুষের দেহে সফলভাবে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করলেন চিকিৎসকরা। জেনেটিক্যালি কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে ওই শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পর রোগী সেরে উঠছেন বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এমনকি ৫৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি নিজে শ্বাস নিতে পারছেন বলে নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা। ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসকরা সোমবার এসব তথ্য জানান। তবে এখনই এই প্রতিস্থাপনকে সফল বলতে নারাজ তারা। তবে প্রাণীদের অঙ্গ ব্যবহার করে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীদের চালানো পরীক্ষা নিরিক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় অর্জন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এই চিকিৎসার ফলাফল পর্যবেক্ষণে সামনের দিনগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

সাত ঘণ্টাব্যাপী সার্জারিটির ইতিমধ্যে তিনদিন গত হয়েছে এবং চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন ডেভিড বেনেট নামক সেই ব্যক্তি ভালো আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে সার্জারিটি সম্পন্ন হয়।   

এই ট্রান্সপ্ল্যান্ট ডেভিড বেনেটকে আরও কতোদিন বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হবে তা বলা সম্ভব নয়, তবে তার জীবন রক্ষায় এটি ছিল সর্বশেষ চেষ্টা।   

প্রতিস্থাপনের আগে বেনেট বলেন, "আমি জানি এটি অনেকটা অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো, তবে আমার কাছে আর কোনো পথ খোলা ছিল না।"   

মার্কিন চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান এই প্রতিস্থাপন সম্পন্নের জন্য ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিৎসকদের বিশেষ অনুমতি প্রদান করেছিল। অবশেষে বহু বছরের গবেষণা ও প্রচেষ্টার পর চিকিৎসকদের দলটি এ সফল প্রতিস্থাপনে সক্ষম হলেন।

বেনেটের দেহ মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য উপযোগী ছিল না। কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এ ধরনের সিদ্ধান্ত চিকিৎসকেরা তখনই নিয়ে থাকেন, যখন তার অবস্থা অনেক বেশি গুরুতর হয়।     

ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অফ মেডিসিনের এক বিবৃতিতে সার্জন বার্টলে গ্রিফিথ বলেছেন, 'প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গ স্বল্পতার সমাধানে এই অস্ত্রোপচার বিশ্বকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।'' 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে প্রতিদিন ১৭ জন মানুষ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আশায় থাকতে থাকতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। দেশটিতে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের অপেক্ষমাণ তালিকায় এক লাখের বেশি মানুষ রয়েছে। 

চিকিৎসাক্ষেত্রে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চাহিদা মেটাতে জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন নামে প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ব্যবহারের বিষয়ে অনেকদিন ধরেই গবেষণা চলছে। হৃদপিণ্ডে শুকরের ভাল্ব ব্যবহার এখন অনেকটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে উঠেছে।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে নিউইয়র্কের চিকিৎসকরা ঘোষণা করেন যে, তারা একজন ব্যক্তির দেহে সফলভাবে শুকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন।

তবে যার দেহে সেটি স্থাপন করা হয়েছিল, তিনি কোমায় (ব্রেইন ডেড) চলে যান এবং সেখান থেকে তার সুস্থ হয়ে ওঠার আর কোন আশা ছিল না।

তবে বেনেটকে  নিয়ে সবাই আশাবাদী,  তিনি আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করতে পারবেন।

অস্ত্রোপচারের ছয় সপ্তাহ আগে গুরুতর হৃদরোগ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বেনেট ছিলেন শয্যাশায়ী। দেহের সাথে সংযুক্ত একটি যন্ত্র তাকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করছে।

প্রতিস্থাপনের পর থেকে তাকে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এএফপি নিউজ এজেন্সির খবর অনুযায়ী, শুকরের হৃদপিণ্ডটিকে জিনগতভাবে রূপান্তর করা হয়েছে। কারণ সেখানে এমন কিছু জিন ছিল, যা মানবদেহে প্রতিস্থাপনে বাধা দিতে পারে।

গ্রিফিথ জানিয়েছেন, তারা খুবই সতর্কতার সঙ্গে বেনেটকে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, ''আমরা এর আগে মানবদেহে এমন অস্ত্রোপচার করিনি। থেরাপি বেনেটকে যা দিতে পারতো, আমরা তার চেয়ে ভালো একটি বিকল্প দিতে পেরেছি। অন্তত আমি এটাই বিশ্বাস করি। তবে তিনি একদিন, এক সপ্তাহ, মাস, নাকি বছর বেঁচে থাকবেন, আমি তা জানি না।"

অন্যদিকে বেনেটের ছেলে ডেভিড বেনেট জুনিয়র অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাদের পক্ষে কিছুই বোঝা বা বলা সম্ভব নয়।  

আরও পড়ুন