প্রেম থেকে শারীরিক সম্পর্ক। তিন বছর পর বিদেশে পাড়ি জমায় প্রেমিক। চলতে থাকে দু'জনের যোগাযোগ। প্রেমিকাকে যৌনতার কল্প-জগতে মোহগ্রস্ত করে ফেলেন প্রেমিক।
এক পর্যায়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করে এবং প্রযুক্তির সহায়তায় সে-দৃশ্য সরাসরি দেখে ছেলেটা। ধারণ করে রাখে ভিডিও। এই চক্রের একজন গ্রেপ্তার হলেও মূল অভিযুক্ত হুসাইন ফাহাদ কানাডায়। তাকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
নিলীমা (ছদ্মনাম) কর্মজীবী মা-বাবার সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হুসাইন ফাহাদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। অল্পদিনেই দু'জনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ায় শারীরিক সম্পর্কে। অন্তরঙ্গ দৃশ্য ভিডিও করে রাখা হয়।
তিন বছর পর ২০১৭ সালে কানাডা চলে গেলেও নীলিমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে ফাহাদ। এক সময় নিজের যৌনতার কল্প-জগৎ পূরণে প্রেমিকাকে প্রলুব্ধ করতে থাকে সে।
ভুক্তভোগী নিলীমা বলেন, 'আমার পরিবারে একটু সমস্যা তৈরি হলে সেটার সুযোগ নিয়ে সে একদিন তার মামার বাসায় আমাকে নিয়ে যায় এবং সেখানেই তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়। এ ঘটনার তিন মাস পর সে আমাকে বলে যে তার কিছু ফ্যান্টাসি আছে।'
ফাঁদে ফেলে ফাহাদ তার নিজের মামার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে নিলীমাকে জোর করে। অস্বীকৃতি জানালে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে ফাহাদের মামা সিফাতের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হয় নিলীমা। এভাবে একের পর এক নিজের অন্য বন্ধু ও স্বজনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়তে বাধ্য করে ফাহাদ।
ভুক্তভোগী নিলীমা আরো বলেন, 'একটা সময় আমি রাজি হই। যাতে সে আমাকে ভাইরাল না করে। সে যা বলবে সেটাই করার কথা মেনে নেই। এরপর সে সিফাতের ঠিকানা দিয়ে সেখানে যেতে বলে এবং না গেলে সমস্যা হবে বলেও আমাকে সতর্ক করে। সিফাতের সাথে সম্পর্কের ভিডিও সরাসরি সে হোয়াটসআপে সংগ্রহে রাখে।'
এক পর্যায়ে বিকৃত যৌনাচারে জড়াতে অস্বীকৃতি জানালে পর্নসাইটে নিলীমার ভিডিও ছেড়ে দেয়া হয়। মেয়েটা মামলা করলে ফাহাদের মামা আইইউবিটি'র হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম বিভাগের ছাত্র সিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর মূল অভিযুক্ত কানাডা প্রবাসী ফাহাদকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা নিচ্ছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, 'এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের পাশাপাশি পর্ন আইনে মামলা হবে। একটি ঘটনা ঘটিয়ে আপনি পার পেয়ে যাবেন সেটা করার সুযোগ কম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।'
ইন্টারনেট ব্যবহারে আরো সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে এ কে এম হাফিজ আক্তার আরো বলেন, 'সব সময় সম্পর্ক এক রকম থাকেনা। এভাবে ব্ল্যাকমেইলের সুযোগ যেন কেউ না পায় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।'
সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে এই মেয়েটির মতো অনেক দুর্ঘটনাই ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।