বাঙালি মেয়েদের শাড়িতেই যেন রূপটা বেশি খোলে। শাড়ি বাঙালি নারীদের প্রতিচ্ছবি। পশ্চিমা সভ্যতার চাকচিক্য যতই ছেয়ে ফেলুক না কেন ফ্যাশন দুনিয়াকে, চিরন্তন বাঙালী পোশাক শাড়িকে কেউই ভুলতে পারেনি, পারবেও না।
কিন্তু শাড়ি যে শুধু নারীর পরিধেয়ই হতে হবে, এমনটা কেন? যুগ বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে অনেক কিছুই। শুধু একটাই জিনিস এখনো জগদ্দল পাথরের মতোই নট নড়ন চড়ন অবস্থায়। সেটা হল মানুষের চিন্তাধারা। ওটিকে বদলানো বড় সহজ কাজ নয়। আর এই কঠিন দায়িত্বটাই স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন পুষ্পক সেন।
গোলাপি আর শুধু মেয়েদের রং নেই। পুরুষের রং শুধু নীল-সাদা-কালো নয়। রণবীর সিং থেকে হ্যারি স্টাইল, চিরাচরিত ফ্যাশন-ভাবনাকে দুমড়ে মুচড়ে ভাঙছেন অনেকেই। কিন্তু তাই বলে পুরুষের পরনে শাড়ি! কপালে লাল টিপ! আঙুলে নেইল পলিশ!
নিজেকে ‘বং মুন্ডা’ নামে পরিচয় দেন কলকাতার এই ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার। শাড়িতে যে শুধুই মহিলাদের অধিকার নেই, পুরুষরাও সগর্বে শাড়িতে সাজতে পারেন সেটাই হয়ত সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চান পুষ্পক। ১২ হাত লম্বা এই আভিজাত্যকে বিভিন্ন রকম স্টাইল করে পরেন তিনি।
মেকআপ নিয়েই সময় কাটে তার। কারণ এটা শুধু তার কাছে ফ্যাশন নয়, প্যাশনও। পুষ্পকের কথায়, ‘‘শাড়ি পরলে বা ওই বাহ্যিক সাজে পৌরষত্ব চলে যাবে, তা তো নয়। ভিতরের আমি তো আমিই। আমি চেয়েছিলাম, গোটা পৃথিবী শাড়িকে ফ্যাশন-স্টেটমেন্ট হিসেবে দেখুক।’’
সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে পুষ্পকের সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। রীতিমতো ভাইরাল হয় তার ছবি। পুরুষ শাড়ি পরলেই যে দাড়ি গোঁফ কেটে ফেলতে হবে, এমন চিন্তাধারাতেও বিশ্বাসী নন পুষ্পক। এক মুখ দাড়ি গোঁফ নিয়েই দিব্যি শাড়ি পরে সাজেন তিনি। পরেন বাহারী গয়না।
শোভাবাজারে একটি চায়ের দোকানে একবার চা খেতে গিয়েছিলেন পুষ্পক। আশেপাশের অনেকেরই কৌতূহলী দৃষ্টি নজর এড়ায়নি তাঁর। তখন থেকেই এই দৃষ্টিগুলো বদলানোর চেষ্টা শুরু পুষ্পকের। এখন তিনি ‘বং মুন্ডা’। ১৯ হাজারের উপরে ফলোয়ার তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে।
শাড়ি পরে শুধু কলকাতা নয়, বিদেশেও গিয়েছেন পুষ্পক। ইতালির রাস্তায় তাঁর শাড়ি আর কপালে লাল টিপ পরা ফটো তুমুল ভাইরাল হয়েছিল। ব্লাউজ ছাড়া লাল পাড় সাদা শাড়ি, নাকে নথ আবার জমকালো বেনারসীতেও নিজেকে সাজিয়েছেন পুষ্পক। তেমনি কুর্তি লেগিংস বা জিন্স এথনিক কুর্তা পরেও স্টাইল করেছেন পুষ্পক। নেট দুনিয়ায় পুষ্পক সেন এখন ফ্যাশন আইকন।
তার ৫৪ বছরের মাকে নিয়ে একটি ঘটনা জানা যায়। একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে লাল লিপস্টিক পরায় পুষ্পকের মা'কে শুনতে হয়েছিল তার বয়স নিয়ে কটুক্তি, নানা অশালীন মন্তব্য। প্রতিবাদ স্বরূপ পুষ্পক নিজেই গাঢ় লাল লিপস্টিকে নিজেকে রাঙিয়ে সেই ছবি পাঠিয়েছিলেন 'বিদ্রুপ' করা, সমালোচনা করা সমস্ত আত্মীয়কে, সঙ্গে লিখেছিলেন, ' দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন'।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা একটি প্রথা হঠাৎ করে বদলে দেয়া এত সোজা নয়। কিছু নেটিজেন প্রশংসা করলেও সমালোচনাও কম জুটছে না তার কপালে। যদি বলা হয় সেই সব দিন আজ অতীত। এখন আর পোশাক দিয়ে লিঙ্গ বিচার হয় না, মহিলাদের বহু পোশাকে আজ পুরুষরা সাবলীল আর পুরুষদের পোষাকেও সাবলীল মেয়েরা! সবাই কিন্তু এই কথার সাথে একমত হবেন না। যত যাই বলুন না কেন, কাল নিশ্চয়ই আপনি আপনার মা, স্ত্রী কিংবা বোনের সালোয়ার কমিজ অথবা শাড়ি পরে অফিসে যাবেন না!