মহামারি করোনা কেড়ে নিলো আরো এক সৃষ্টিশীল নক্ষত্রকে। বহুমাত্রিক সৃজন ক্ষমতার অধিকারী চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনি। বাদ আসর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
দীর্ঘদিন হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনি জটিলতায়ও ভুগছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে পাঁচ দশকের বেশি সময়ের পদচারণা মুতর্জা বশিরের। নিজেকে বাস্তবধর্মী শিল্পী পরিচয় দিতে পছন্দ করতেন গুণি এই চিত্রকর।তিনি বলতেন,'আমি নিজেকে দাবি করি একজন বাস্তবধর্মী শিল্পী হিসেবে। আমার দেখার দৃষ্টিটা রেনেসা পেইন্টারদের মতো।'
বাম রাজনীতিতে বিশ্বাসী মুর্তজা বশির ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি ছিলেন সম্মুখভাগে, ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত আবুল বরকতকে অন্য অনেকের সাথে হাসপাতালে নিয়েছিলেন মুর্তজা বশিরও।
বহু ভাষাবিদ পন্ডিত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কনিষ্ঠ ছেলে শিল্পী মুর্তজা বশিরের আক্ষেপ ছিলো বাবাকে নিয়ে। স্বাধীন বাংলাদেশে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে নিয়ে কোনও গবেষণা হয়নি।
মুর্তজা বশীরের জন্ম ১৯৩২ সালের ১৭ই আগস্ট ঢাকায়। নবকুমার ইনস্টিটিউশনে শিক্ষাজীবন শুরু, পরে ঢাকা গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস এ পড়েছেন, এখন যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। এছাড়া ইতালি, ফ্রান্সেও তিনি অধ্যয়ন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সপরিবারে চলে যান বিদেশে, তা নিয়ে অপরাধবোধের কথাও জানান বিভিন্ন সময়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ছিলেন মুতর্জা বশির। ‘রক্তাক্ত ২১শে’, ‘দেয়াল’, ‘শহীদ শিরোনাম’, ‘পাখা’ তার উল্লেখযোগ্য সিরিজ। তৈরি করেছেন নামকরা সব মুরাল। রয়েছে বেশকিছু গবেষণাগ্রন্থ।
মুর্তজা বশীর দীর্ঘদিন ভুগছিলেন নানা জটিল রোগে। বৃহস্পতিবার তার অবস্থার অবনতি হলে নেয়া হয় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। করোনা আক্রান্তও ছিলেন মুর্তজা বশীর।
মুতর্জা বশিরের মেয়ে মুনিরা বশির জানান,'হার্টের একটা অসুখে ভুগছিলেন। তবে প্রধানত তিনি শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি সব কাজে শতভাগ দিতে চেষ্টা করতেন। তিনি বলেন আমি সাধারণের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। মৃত্যুর পর যেন সকলে আমাকে মনে রাখে।'
মৃত্যুর পরও অমর থাকার তৃষ্ণা জানিয়েছিলেন শিল্পী মুর্তজা বশির। বলতেন, পাবলো পিকাসোর চেয়ে এক বছর বেশি বাঁচতে চান।তিনি।