সাউথ এশিয়ান গেমসে প্রথম নারী অ্যাথলেট হিসেবে ৩ স্বর্ণপদক জিতেছেন তীরন্দাজ ইতি খাতুন। বাল্যবিয়েকে অস্বীকৃতি জানানো ইতি এখন তার বাবা-মা ও এলাকাবাসীর গর্ব।
চুয়াডাঙ্গার বেলগাছী মুসলিমপাড়া এলাকার দরিদ্র হোটেল শ্রমিকের মেয়ে ইতি খাতুন। পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বাল্যবিয়ের পিড়িতে বসতে হয় ইতিকে। তবে, বাল্যবিয়ের বলি হতে না চেয়ে সেই বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যায় বাড়ির বড় মেয়েটি। চুয়াডাঙ্গায় আর্চারির প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচীতে ইতি যোগ দেন উন্মুক্ত ট্রায়ালে। সেখানে পেয়ে যান সুযোগ।
তারপরও বিয়ের চাপ চলতেই থাকে। তাই, তিনি বিয়ের পিড়ি থেকে পালিয়ে যান। নিশানাভেদটা সেদিন ভালো করেছিলেন বলে তীর-ধনুকের একাধিক পরীক্ষায় উতরেও যান। স্থানীয় এক কোচের মাধ্যমেই চলে আসেন জাতীয় পর্যায়ে। প্রতিভা বুঝতে পেরেই তাকে দলে নিয়ে নেন তীরন্দাজ সংসদ। সেখানেই তার আর্চারির পাঠ। সেখান থেকে আজ তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সেরা আর্চারদের একজন।
একটির পর একটি সাফল্য বিজয়ের হাতছানি দিচ্ছিলো ইতিকে। সর্বশেষ নেপালের পোখরায় চলমান এসএ গেমসে দলগত, মিশ্র ও ব্যক্তিগত ইভেন্টে তিনটি স্বর্ণপদক জয় করে সাফল্যের শীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করে নিজেকে। তার এই সাফল্যে দারুনভাবে উজ্জীবিত স্বজনরা। আর, শুধু স্বজনরাই নয় তার এ অভাবনীয় সাফল্যে খুশি তার প্রতিবেশীরাও।
মেয়ের এমন সাফল্যে আবেগ আপ্লুত ইতির বাবা-মা। ভাবনাতীত এমন জয়ে বেশ খুশি তারা। মেয়ের উত্তরোত্তর সাফল্যে দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন তারা। ইতির বাবা ইবাদত আলী বলেন, 'একসময় আমার নিজের ইচ্ছাতেই একটা দুর্ঘটনা হতে যাচ্ছিলো। ও রাগ করে চলে গিয়ে খেরায় নাম দেয়। সবার কাছে দোয়া চাই সে যেন ভালো কিছু করতে পারে। দেশকে ভালো কিছু দিতে পারে।'
ইতির মা আলেয়া খাতুন বলেন, 'আমরা অনেক খুশি। অনেক আনন্দ লাগছে। চাই ও যেন আরও ভালো করতে পারে। ওর অনেক নাম হোক ও সম্মান পাক।'
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি খুব আগ্রহ ছিলো তার। তখন থেকেই নানা ধরনের খেলায় অংশ নিতো ইতি। সেই শখের আগ্রহ থেকে তার এই অভাবনীয় সাফল্য। ইতির স্বর্ণ শিখরে পৌছানোতে গর্বিত জেলার ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরাও। তার এই সাফল্যের খবরে জেলার অন্যান্য নারী আর্চারদের মনোবল আরও বৃদ্ধি পাবে ও দেশের আর্চারীতেও নারীদের অংশগ্রহনও বাড়বে বলে মনে করেন তারা।