বিদেশফেরত যাত্রীদের মালামাল লুট করতে বিমানবন্দরেই ফাঁদ পেতে থাকে সংঘবদ্ধ একটি চক্র। চক্রের সদস্যরা গেল এক বছরে শতাধিক লুটের মালামাল বেচে আয় করেছে চল্লিশ লাখ টাকা। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন মধ্যবয়স্ক এক হাজি।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশফেরৎ যাত্রীদের মালামাল লুট করতে ওৎ পেতে থাকে সংঘবদ্ধ চক্রটি। বিদেশফেরত যাত্রীদের গন্তব্য জেনে নেয় চক্রের একজন। পরে এই তথ্য জানিয়ে দেয় অন্য সদস্যদের। তখন প্রবাসী সেজে বিদেশফেরত ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ জমায় চক্রটি। একই এলাকায় বাড়ির কথা বলে, টার্গেট ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে বাস কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কাটে চক্রের সদস্যরা।
ঢাকার বাইরে যাত্রাবিরতিতে প্রবাসীকে চেতনানাশক মেশানো ডাবের পানি কিংবা জুস পান করায় চক্রের সদস্যরা। ফের বাসযাত্রা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই অচেতন হয়ে পড়েন টার্গেট ব্যক্তি। গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই তার মালামাল নিয়ে বাস থেকে নেমে পড়ে চক্রের সদস্যরা।
ভুক্তভোগী বাংলাদেশি-ব্রিটিশ নাগরিক ওমর শরীফ জানান, তার ব্রিটিশ পাসপোর্ট, ব্যাংক কার্ড, ব্যাংকের চেক এবং আড়াই লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা।
এ রকম আরও কিছু অভিযোগের তদন্তে নেমে সাত-আট জনের সংঘবদ্ধ চক্রটি চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চক্রের প্রধান হাজি মাসুদুল হক, আমির হোসেন ও মোহাম্মদ শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে চারটি পাসপোর্ট, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, নগদ টাকা ও ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এক বছরে শতাধিক ব্যক্তির মালামাল লুট করেছে এই প্রতারক চক্রটি।
গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার কায়সার রিজভী কোরায়েশী বলেন, ‘ভিকটিম বয়স্ক মানুষ হলে প্রতারক চক্রের বয়স্ক ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে কথা বলে আস্থা অর্জন করার চেষ্ট করে। এভাবে
প্রতারক চক্র এক বছরে শতাধিক ব্যক্তির মালামাল বেচে আয় করেছে ৪০ লাখ টাকা।
গোয়েন্দা বিভাগের উপ কমিশনার কাজী শফিকুল আলম বলেন, ‘চক্রটি এ ধরনের প্রতারণা বহুবার করেছে। কিন্তু সব কাজ যে ডাকাতি তা না। যখন লোকজন কম ছিল তখন ছিনতাইও করত তারা। এখন তাদের সংঘবদ্ধ চক্রে পাঁচ ছয়জন যোগ হয়েছে’।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান একেএম হাফিজ আক্তার জানান, একটি নির্দিষ্ট সময় নিয়ে দেশে আসেন প্রবাসীরা। তাই বেশিরভাগ সময়ই মামলা করেন না তারা।
তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশ থেকে যারা আসেন তারা কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট টা জিডি করায়, পরে একটা পাসপোর্ট আদায় করে আবার তারা দেশের বাইরে চলে যান। তারা সময় পান না তাই মামলা চালাতেও কষ্ট হয়। আর এই সুবিধাটাই অপরাধ চক্র নেই।
সংঘবদ্ধ চক্রটির বাকি সদস্যদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ।