বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি নেতারা

খালেদা জিয়াকে দ্রুত বিদেশে না পাঠালে জনগণ চুপ করে বসে থাকবে না

শামীম আহমেদ

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ৩০শে নভেম্বর ২০২১ ০৬:৫১:৫৪ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি না দিলে যদি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে যায় তাহলে জনগণ চুপ করে বসে থাকবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ এসব কথা বলেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির দাবিতে ঘোষিত ৮ দিনের কর্মসূচীর মধ্যে আজ মঙ্গলবার বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করেছে বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টায় এই সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে সকাল ৯টার পরই সমাবেশে জড়ো হতে থাকে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মী। এসময় প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুনসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা দলীয় প্রধানের মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।

সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান সরকারের উদ্দেশে বলেন, অবিলম্বে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন নইলে জনগণ ক্ষমতা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামাবে। রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে চালাতে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন শুরু করতে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্ষমতাসীনরা চায় খালেদা জিয়া বিনা চিকিৎসায় মারা যাক। খালেদা জিয়ার কিছু হলে বর্তমান সরকার দায়ী থাকবে। আ.লীগ নয়, বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে সাধারণ মানুষ। ইতিহাস বিকৃত করে ইতিহাসের নায়কদের চরিত্র হরণ করছে তারা। সরকারের জনপ্রিয়তা নেই তাই অতি অল্প সময়ে এই সরকারের পতন ঘটবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা রাজনৈতিক মামলা, এর আইনি ভিত্তি নেই। খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আ.লীগ ভালো কাজ করে থাকলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভয় পায় কেন? কর্তৃত্ববাদী ও একদলীয় শাসনের রোল মডেল হলো বর্তমান সরকার।

সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে বিদেশে না পাঠালে জনগণ চুপচাপ বসে থাকবে না। অনৈতিক সরকারকে তারা উৎখাত করবে।

মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎকরা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় আবার খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ হয়েছে। খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, অসুখের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তার চিকিৎসা নিশ্চিতে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে বাধ্য করব দেশনেত্রীকে চিকিৎসা দিতে। আর ডাক্তার সাহেবরা বিএনপি যা বলতে বলেছে তা বলেছে এমন মন্তব্য করা মন্ত্রীকে ধিক্কার জানাই।

এদিকে, চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া কালামিয়া বাজার কেবি কনভেনশন হল মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, চট্টগ্রামের আজকের সমাবেশ রায় দিয়েছে খালেদা জিয়ার মুক্তির, বিদেশে উন্নত চিকিৎসার। ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন, বিএনপি আছে কি নেই, তখন বুঝবেন। বর্তমান সরকারের আর সময় নেই। ঐক্যবদ্ধভাবে বাধা দিতে পারলে সরকারের ভিত্তি থাকবে না।

অন্যদিকে, রাজশাহী নগরীর মালোপাড়ায় বিএনপির মহানগর কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন চলছে। তিনিও বলেন, খালেদা জিয়ার কিছু হলে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে তা থামানো যাবে না। দেশ নৈরাজ্যের দিকে চলে যাবে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসা করাতে পারলে সুস্থ হয়ে তিনি আবারো রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন। তখন দেশের আর কোনো সংকট থাকবে না।

এছাড়া, খুলনা নগরীর কেডি ঘোষ রোডে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ রায় বলেন, খালেদা জিয়া কারো কাছে ক্ষমা চাইবেন না। কেউ তাকে নিয়ে ঠাট্টা করবেন না। হয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন না হয় ক্ষমতা থেকে নামতে প্রস্তত হন।

এদিকে, সিলেট নগরীর রেজিস্ট্রারী মাঠে বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মুক্ত করে দিচ্ছে না। দলীয় চেয়ারপার্সনের মুক্তির জন্য প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি চলবে, এতে সবাইকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান তিনি।

রংপুরে নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ে জেলা কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, খালেদা জিয়া যখন জেলে গিয়েছিলেন তখন তার লিভারের সমস্যা ছিল না। জেল থেকে বের হওয়ার পর এখন রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যদি বলি জেলে তাকে খাবারের সঙ্গে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে, তাহলে নিশ্চয় ভুল হবে না। খালেদা জিয়া কারো কাছে ক্ষমা চাইবে না। তাকে মুক্তি দেয়া না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে।

ময়মনসিংহে বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার বিএনপি নেন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বাধা দিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশের যতো আইন খালেদার জিয়ার ও বিএনপির জন্য।

তাছাড়া, বরিশালে আয়োজিত সমাবেশে অংশ নেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তারও হুঁশিয়ারি দেন খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় নিতে হবে সরকারকে।

আরও পড়ুন