বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক, ধর্ম, ইসলাম

বিশ্বে যেভাবে শুরু হয়েছিলো ঈদ উৎসব উদযাপন

সামান্তা সাইদ খান

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ১লা মে ২০২২ ০১:১৬:৪৮ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর (রোজ়ার ঈদ) এবং ঈদ-উল-আযহা (কোরবানীর ঈদ)। এই ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষজন এর থাকে নানা প্রস্তুতি। ঈদ প্রতি বছরই মুসলমানদের জীবনে খুশির বার্তা নিয়ে আসে। দিবসটিতে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই কোলাকুলি, সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।

দীর্ঘ সিয়াম সাধনার পর রমজানের শেষে আসে পবিত্র ঈদ উল ফিতর। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে শাওয়াল মাসের ১ম দিনে ঈদুল ফিতর উৎসব পালন করা হয়। ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামী পরিভাষায় ‍‍লাইলাতুল জায়জা‌ বলা হয় যার অর্থ পুরস্কারের রজনী। তবে আমাদের এখানে এটি "চাঁদ রাত" হিসাবে বেশ পরিচিত। শাওয়াল মাসের চাঁদ অর্থাৎ সূর্যাস্তে একফালি নতুন চাঁদ দেখা গেলে পরদিন ঈদ ঘোষণা করা হয়। এটি ইসলামী শরিয়তের বিধান।

ঈদ-উল আযহা কখন আর কোন প্রেক্ষাপটে চালু হয়েছিল তা ইতিহাস থেকে জানা যায়। কিন্তু ঈদ-উল ফিতর কখন আর কিভাবে প্রচলিত হয়েছিল, সে সম্পর্কে তথ্য কমই জানা যায়।

ঈদ উল ফিতরের ‘ঈদ’ শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ ‘আউদ’ থেকে যার অর্থ উৎসব যা বারবার ফিরে আসে।  আর 'ফিতর' এসেছে আরবি ‘ফিতরা’  শব্দ থেকে যার অর্থ ভেঙে দেওয়া। অর্থাৎ ঈদ উল ফিতর হল রোজা ভাঙ্গার আনন্দের দিন বা উৎসব যা পুনরায় ফিরে আসে। তবে ঈদের সামাজিক অর্থ সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব। পুরো রমজান মাসে কঠোর সংযম পালনের মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের ভেতরের সব রকমের খারাপ প্রবৃত্তিকে দমন করে। এরপর রমজানের শেষে আসে ঈদুল ফিতর বা যা চলতি ভাষায় রোজার ঈদ নামেও পরিচিত। সারা বিশ্বের মুসলমানরা এদিন রোজা ভঙ্গ করে আল্লাহর অশেষ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে আনন্দ-উৎসব পালন করে থাকেন। 

ঈদ চালু হয় যেভাবে

মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর ঈদ পালনের রীতিনীতি চালু হয়। মুসলমানরা প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করে হিজরি ২য় সনে। ইংরেজি সাল গণনায় ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের শেষের কোন একটি দিনে দিনটি পালন করা হয়। এদিন নবী মোহাম্মদ (সা:) ছোট-বড় সবার সঙ্গে ঈদ আনন্দের সময় কাটাতেন। মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরদের সঙ্গে বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা.) ঈদ আনন্দ শেয়ার করতেন। তিনি শিশু কিশোরদের শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত সব ধরনের আনন্দ করার অনুমতি দিতেন।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদিসগ্রন্থ সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় এসেছে, মহানবী (সা.) যখন মদিনায় আগমন করেন তখন তাদের দুটি দিন ছিল, যাতে তারা উৎসব পালন করত। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এ দুটি কিসের দিন? তারা বলল, আমরা জাহেলি যুগে এ দুই দিন খেলাধুলা ও আনন্দ- উৎসব পালন করতাম। এ নিয়মই চলে আসছে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দুটির পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। ’ ( হাদিস নাম্বার : ১১৩৬)

আমাদের এদেশে কীভাবে ঈদ উৎসবের প্রচলন শুরু হয়েছে তার ইতিহাস ও সঠিক তথ্য খুব একটা জানা যায়নি। নানা ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সূত্র ও তথ্য থেকে রোজাপালন এবং ঈদ-উল-ফিতর বা ঈদ-উল-আজহা উদযাপনের যে ইতিহাস জানা যায় তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের মতে,  ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে এলেও এ দেশে নামাজ, রোজা ও ঈদ উৎসবের প্রচলন হয়েছে তার বেশ কিছু আগে থেকেই। কেননা, বঙ্গদেশ যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুসলিম অধিকারে আসার বহু আগে থেকেই মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ ও সাধকরা ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে উত্তর ভারত হয়ে পূর্ব বাংলায় আসেন। অন্যদিকে আরবীয় ও অন্যান্য মুসলিম দেশের বণিকরা চট্টগ্রাম নৌবন্দরের মাধ্যমেও বাংলার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এভাবেই একটা মুসলিম সাংস্কৃতিক, তথা ধর্মীয় প্রভাব পূর্ব বাংলায় এসে পড়েছিল। ঈদ উৎসবের সূচনাও ওই প্রক্রিয়ায়ই হয়েছে বলে তার মত।

ঈদ যেভাবে রাসুল (সা.) পালন করতেন

ঈদের দিন মহানবী (সা.) সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতেন এরপর গোসল করে সুগন্ধি মেঁখে উত্তম পোশাক পরিধান করতেন। ঈদুল ফিতরে তিনি মিষ্টি খাবারও খেতেন। ঈদগাহে যাওয়া-আসায় ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করতেন। ঈদগাহে গিয়ে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। নামাজ শেষে তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করতেন।  ঈদুল ফিতরের খুতবায় ঈদের করণীয় কাজ এবং ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব বর্ণনা করতেন। তিনি সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতেন। গরিব-দুঃখীদের খোঁজখবর নিতেন। ছোটদের ভালবাসতেন।

 

আরও পড়ুন