আজ ৩রা মার্চ। ১৯৭১ সালের এদিন বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তির সংগ্রামে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো রংপুর। বিক্ষোভ মিছিল থেকে উর্দু লেখা সম্বলিত এক সাইনবোর্ড ভাঙতে গিয়ে এক অবাঙ্গালির গুলিতে নিহত হন কিশোর শংকু।
বলা হয়, স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহিদ তিনি। তবে এখনো বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শংকুর পরিবার।
জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে ৩রা মার্চ সারা দেশে হরতালের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদিন সকালে কারফিউ উপেক্ষা করে রংপুরের সর্বস্তরের মানুষ মিছিল নিয়ে এগিয় যেতে থাকে স্টেশনের দিকে। সেই মিছিলের সম্মুখভাগে ছিলেন কিশোর শংকু। মিছিলটি স্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছালে একটি ভবনের উর্দুতে লেখা সাইনবোর্ড ভাঙতে যায় শংকু। এসময় ভবনের ভিতর থেকে এক অবাঙ্গালি গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই মারা যান শংকু সমজদার। গুলিবিদ্ধ হন শরিফুল নামে আরেক ছাত্রলীগকর্মী। কিছুদিন পর তিনিও মারা যান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুল বলেন, 'মিছিলটি যখন যাচ্ছিল তখন এক অবাঙ্গালী তার বাড়ির ছাঁদ থেকে মিছিলটিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। সেখানেই শংকু নিহত হয়।'
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু বলেন, 'পুরো শহর তখন আন্দোলনে ফুসে উঠেছিল। সারা শহরের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জনগণ আগুন লাগিয়ে দেয়। তখন ২৪ ঘন্টার জন্য কারফিউ জারি করে তৎকালীন রংপুর জেলা প্রশাসক।'
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ায় এবং তার স্মরণে কোনো স্মৃতিফলক না হওয়ায় ক্ষোভ জানান শংকুর মা। শহিদ শংকুর মা দিপালী সমজদার বলেন, 'সবাই কি বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ করে? কেউ কি শুধু কলম দিয়ে লিখে যুদ্ধ করে? বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে যুদ্ধে অংশ নেয়। এতো বছর হয়ে গেল আমার শংকুকে আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করতে পারিনি।'
তবে সম্প্রতি রংপুরে শংকু সমজদারের নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। 'শহিদ শংকু সমজদার বিদ্যা নিকেতন' এর প্রতিষ্ঠাতা উমর ফারুক বলেন, 'তার মায়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য আমরা চেষ্টা করেছি শংকুর নামে একটা প্রতিষ্ঠান করার। সেজন্যই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করা।
শংকু সমজদারকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান তার স্বজন ও স্থানীয়দের।