নির্ধারিত বাড়ির কাজ জমা না দিয়ে অন্য লেখা জমা দেয়ার অপরাধে কওমি মাদ্রাসার দ্বিতীয় জামায়াতের ৭ বছরের এক শিশু শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট করেছে শিক্ষক আবু সাইদ। মারপিটের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়ে পড়ে। এতে করে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থী মারপিটের ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে বিষয়টি সুরাহা করতে সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিকাল ৫টার পর সালিশি বৈঠকের আয়োজন করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এমন অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের ঢেবঢেবি বাজার কুলছুম কওমি মাদ্রাসায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মারপিটের ভিডিও ক্লিপটি আপলোড করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, মাদ্রাসার শিক্ষক আবু সাইদ টুপি মাথায় সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় শিক্ষার্থীর নিকট থেকে পড়া আদায় করছেন। কিছুক্ষণ পর পর গোলাপি পাঞ্জাবি পরিহিত শিক্ষার্থী লাম মিয়াকে আঘাত করছেন। শিশু শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে গুঁতো দিয়ে মাথা নিচু করে মাটিতে ফেলে পশ্চাতে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীর বাম হাত চেপে ধরে জোরে জোরে পেটাতে শুরু করেন। মার সহ্য করতে না পেরে ওই শিক্ষার্থী মাগো বলে চিৎকার করে ওঠে। এতে ওই শিক্ষক আরো জোরে পিটাতে থাকে তাকে। এসময় শ্রেণির অন্যান্য শিক্ষার্থীরা আতংকিত হয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায়।
ভিডিওটির সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই শিক্ষার্থী ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবী বাজারের বাসিন্দা মোতালেব হোসেনের ছেলে লাম মিয়া ওরফে লাল মিয়া (৭)। সে ওই মাদ্রাসার দ্বিতীয় জামাতের শিক্ষার্থী।
ওই শিক্ষার্থীর বাবা মোতালেব হোসেন জানায়, ঘটনাটি মার্চের ২৭ তারিখের। ছেলেকে বাড়ির কাজের জন্য নির্দিষ্ট একটি লেখা দিয়েছিলো। সেই লেখা না এনে অন্য লেখা নিয়ে যাওয়ায় এমন মারপিট করেছে। ছেলে বাড়িতে এসে এসব বিষয় ভয়ে জানায়নি। কিন্তু আমি সোমবার দুপুরে ফেসবুকে ভিডিওটি দেখে ছেলের কাছে সব ঘটনা শুনতে পাই। ছেলে হুজুরের ভয়ে এতদিন আমাদের বিষয়টি জানায়নি। ছেলে কাছে তিনি আরো জানতে পারেন মারপিটের কথা কাউকে বললে তাকে মেরে ফেলবে বলে হুজুর ভয় দেখিয়েছে।
মোতালেব হোসেন আরো বলেন, আমার ছেলে ছাড়াও আরো তিন চারজন শিক্ষার্থীকে ওই হুজুর একইভাবে নির্যাতন করেছে বলে জানতে পেরেছি। এই বিষয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা সোমবার বিকেলে অভিযুক্ত শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেয়। মাদ্রাসা কমিটির লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় ঝামেলা এড়াতে মামলায় যাননি বলে জানান তিনি।
ভুরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় থানায় কোন অভিযোগ না পেলেও শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা শোনার পর সরেজমিনে তদন্ত করেছি। অভিযোগ না পেলেও প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।