ঘন কুয়াশার ফাঁকে পূর্ব আকাশে রক্তিম সূর্যের উঁকি। আজ ১৬ ডিসেম্বর, বিজয়ের উল্লাসে দেশ। মেহেদির লাল রঙে বধূবেশে বাসর সাজানো ঘরে বর শরিফের সঙ্গে নতুন জীবনের স্বপ্ন বুননের নানা কথা বলার ছিলো তাসলিমার।
যাত্রা শুরু করেছিলো স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে। উৎসব মুখর পরিবেশে দুপুরে মায়ের কোল ছেড়ে নতুন ঘরে নদীপথে যাচ্ছিল নববধূ। কিন্তু মাঝ নদীতে প্রচন্ড ঢেউয়ের তোড়ে নৌকা ডুবে লাল মেহেদি ধুয়ে মিলিয়ে যায় মেঘনার অপার জলরাশিতে। বাবা-মায়ের আনন্দ অশ্রু পরিণত হয় বেদনার অশ্রুতে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যে বাড়ি ছিলো আনন্দের রঙে রঙিন, আজ সে বাড়িতে কান্নার রোল, হাজারো মানুষের ভিড়। সন্তান হারানো মায়ের চিৎকারে ভারি হয়ে উঠেছে হাতিয়ার চানন্দীর আজিম নগরের ব্যবসায়ী ইব্রাহিমের বাড়ি। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে হতবাক বাবা-মা। নববধূকে হারিয়ে সজ্ঞাহীন বর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিয়ের অনষ্ঠানের নানা অবশিষ্টাংশ, কোথাও পড়ে রয়েছে মৃতদের কাপড়। এখনো ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে দুটি সাজানো গেইট। শুধু নেই যাকে নিয়ে আয়োজন সে তাসলিমা। মঙ্গলবার রাতেই বাবার বাড়ির পাশের মসজিদ সংলগ্ন মাটিতে চিরদিনের বিছানায় শায়িত হয় দাদি আর নববধূ তাছলিমা।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে হাতিয়ার মেঘনা নদীতে ট্রলারডুবিতে নববধূ তাসলিমা, তার দাদি, চাচিসহ প্রাণ হারায় সাতজন। দুপুর দেড়টার দিকে স্থানীয় আয়েশা আলী ঘাট থেকে নববধূ, বরসহ ৭০-৭৫ জনের বরযাত্রী ট্রলারটি নদী পথে যাচ্ছিল ভোলার ডালচরে। মাত্র দুই কিলোমিটার যাওয়ার পরই বিকেল ৩টার দিকে জোয়ারের তোড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতরে কূলে আশ্রয় নিলেও নববধূ তাসলিমা, তিন শিশু ও তিন নারী প্রাণ হারায়। মৃতরা হলেন: নববধূ তাসলিমা বেগম (২১), নুর জাহান, আছমা বেগম, রাহেনা বেগম, নুর জাহান, শিশু আফরিন আক্তার লামিয়া, মিলি আক্তার ও হোসনে আরা বেগম রুপা। সাত শিশু ও এক নারীসহ এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৮ জন।
নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ স্থানীয় জেলে ও ইউপি সদস্যরা এখনো নিখোঁজদের উদ্ধারে কাজ করছে। তবে কবে নাগাদ উদ্ধার করা সম্ভব হবে জানাতে পারেনি কেউ।
কারো কাছে অনুদান নয়, শোকে ভেঙে পড়া আত্মীয় স্বজনদের দাবি প্রশাসন দ্রুত নিখোঁজদের উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেবে তাদের মাঝে।