জেলার সংবাদ, অপরাধ

শিকলে বাঁধা বৃদ্ধা মায়ের ঠিকানা গোয়াল ঘর

আনোয়ার হোসেন

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ১৫ই অক্টোবর ২০১৯ ০৯:৫৪:৩২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ছেলেদের ঘরে ঠাঁই নেই, তাই গোয়াল ঘরে বাঁধা হয় গরুর শিকল দিয়ে।

গর্ভে ধারণ করে পরম যত্নে বুকে আগলে রেখে লালন পালন করলেও বৃদ্ধ বয়সে সেই মায়েরই ঠিকানা হয়েছে গোয়াল ঘরে। এমনকি মানসিক রোগী আখ্যা দিয়ে কোমড়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন ছেলেরা। এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের চরধুপতি গ্রামে ।

প্রতিবেশীরা জানান, গত ৫ মাস ধরে মা খবিরুন্নেসা (৭৫) কে গোয়াল ঘরে বিছনা পেতে গরু বাঁধার রশী দিয়ে তাঁকে বেঁধে রাখা হয়। একদিন রশী খুলে তিনি মেয়ের বাড়িতে যাবার পথে ফের তাকে ছেলেরা ধরে এনে একই স্থানে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। শেকল বাঁধা অবস্থায় প্রায় ৫ মাস তিনি গোয়াল ঘরেই জীবন যাপন করছেন। বয়সের ভারে কানে একটু কম শুনলেও খবিরুন্নেসাকে তাঁরা স্বাভাবিক হিসেবেই জানেন।

মূলত জমি-জমা ভাগ বাটোয়ারা হওয়ার ছেলেদের কেউ বৃদ্ধা মায়ের যত্ন নিতে রাজী নন। যে কারণে তাকে অযত্ন অবহেলায় গোয়াল ঘরে ফেলে রাখা হয়েছে। ওই গোয়াল ঘরেই দিনে একবার তাকে খাবার দেয়া হয়।


মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধা খবিরুন্নেসাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি গোয়াল ঘরের বিছানায় শেকল বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। শান্তিতে একটি নোংড়া বিছানায় বসে তিনি নাতী-নাতনীদের ডাকছিলেন। শেকলে বাঁধা থাকায় তিনি বিছানা ছেড়ে নামতেও পারছিলেন না। এমনকি মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে মশারীরও কোনো ব্যবস্থা নেই ।এর পরেও ছেলেদের ব্যপারে কোনো অভিযোগ নেই খবিরুন্নেসার।

ছোট ছেলে বাচ্চুকে এসময় ঘরে পাওয়া যায়। বাচ্চু জানান, তিনি মায়ের ঠিকমতই ভরন পোষণ দিচ্ছেন। গোয়াল ঘরে কেন রাখলেন, জানতে চাইলে বাচ্চু বলেন. ‘মায়ের মাথায় সমস্যা, আমি বাইওে কাজবাজে ব্যস্ত থাকি. মা কোথায় কখন চলে যায় তাই বেঁধে রেখেছি’।

বড় ছেলে বাদলের ঘরে গিয়ে দামি আসবাব পত্র ও টিভি ফ্রিজ দেখা যায়। এমনকি নিজের ছেলের পড়াশোনার জন্য গৃহশিক্ষকও রেখেছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে যে বেশ কুশলে জীবন যাপন করছেন, বাদলের ঘরে ঢুকলে যে কেউ অনায়াসেই বুঝতে পারবেন। বাদলকে বাড়িতে না পেলেও  স্ত্রী বেবির সাথে কথা হয়। বেবি বলেন, শাশুড়ি মানসিক রোগী। সে কারণে তাঁকে ছেলেরা বেধে রেখেছেন। 

তবে প্রতিবেশীরা জানান,খবর পেয়ে সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যজিষ্ট্রেট ও ইউপি চেয়ারম্যান ওই বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেণ। এসময় তাকে পরিধেয় বস্ত্র ও নগদ অর্থ প্রদান করে মেয়ে তাসলিমার জিম্মায় দেয়া হয়। 

গৌরিচন্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদেও পক্ষ থেকে বৃদ্ধা খবিরুন্নেসাকে যথাসাধ্য সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়াও তার ভরন পোষণ যাতে নিশ্চিত করা হয় সে ব্যপারে ছেলেদেও ডেকে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। এসময় চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধাকে দু’হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেণ। 

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি চরম অমানবিক। এটি সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ছাড়া কিছু না। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে উদ্ধার করে মেয়ে তাসলিমার জিম্মায় দিয়ে ছেলেদেও ভরন পোষন নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছি। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আরও পড়ুন