শীত আসলেই শহরের ফুটপাতগুলোতে দেখা যায় ভাপা পিঠা, চিতই পিঠাসহ কয়েক প্রকারের মজাদার শীতের পিঠা তৈরীর ধুম।
এসব পিঠা তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন কিছু মানুষ যাদের অধিকাংশই নারী। বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাদের রাস্তার ধারে বসে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরী এবং বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব নারীদের অনেকে মৌসুমী ব্যবসায়ী বলেন, যাদের মাধ্যমে ব্যস্ত নগরজীবনে বসবাসকারীদের মধ্যে শীতের আমেজ দেখা দেয় পিঠা-পুলি কেনাকাটায়।
শীতের সন্ধ্যায় শহরের পথে চলতে দেখা মিলবে পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত এমন মৌসুমী নারী ব্যবসায়ীদের। অনেক নারীদের এ কাজে পুরুষরা সহযোগীতা করেন। একটি বা দুটি চুলার সঙ্গে শীতের পিঠা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে রাস্তার পাশে বসে পড়েন নারীরা। মৌসুমী এসব পিঠা ব্যবসায়ীরা অধিকাংশই দরিদ্র ও অসহায়। অল্প কিছুদিনের জন্য হলেও এই উপার্জনে আর্থিক সহায়তা পায় তাদের পরিবার।
এদেরই একজন ছায়রা বেগম। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের নতুন বাজারে পঞ্চাশর্ধ্বো এই নারী পিঠা তৈরি ও বিক্রির কাজ করেন। ছায়রার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর হলো তিনি এই ব্যবসা করে আসছেন। শীত মৌসুমে টানা তিন মাস চলে তার এই ব্যবসা। প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ কেজি চালের গুড়া, গুড়-পাটালী ও নারিকেল নিয়ে রাস্তার পাশে বসে ভাপা পিঠা তৈরি করেন। দিনে প্রায় ১২ থেকে ১৫শ’ টাকার পিঠা তৈরি করেন। একটি গরম ভাপা পিঠা বিক্রি করেন ৫ টাকায়। এখান থেকে যা লাভ হয় তা দিয়ে ভালোমতো সংসার খরচ চলে যায়। এভাবে সারা বছর ব্যবসা চললে তার আর কোন চিন্তা থাকতো না বলছিলেন এই নারী।
সারাদিন শহরের মানুষকে পিঠা বানিয়ে খাওয়ালেও নিজের পরিবারকে কখনও পিঠা বানিয়ে খাইয়েছেন কিনা জানতে চাইলে ছায়রা বেগম বলেন, বিক্রি না হওয়া বাড়তি ঠান্ডা পিঠাগুলো তারা খেয়ে থাকেন। বিক্রি শেষে প্রতিদিনই কিছু না কিছু পিঠা বেচে যায়। সেগুলো রাতের খাবার হিসেবে খেয়ে থাকেন।
ঝিনাইদহ শহরের আরেক পিঠা ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম জানান, তিনি পিঠা তৈরি করেন আর তার স্ত্রী বিক্রি করেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে দুপুরের পর ফুটপাতে বসে ভাপা পিঠা তৈরী শুরু করে। রাত ১০টা পর্যন্ত চলে তাদের ব্যবসা। পিঠা তৈরির জন্য খরচ বেশি হয়না, যে কারণে ভালো লাভ হয়। এই টাকা দিয়ে সংসারের কিছুটা খরচ চলে।