ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও পদার্থ বিজ্ঞানী অজয় রায়ের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মরদেহ বারডেম হাসপাতালকে দান করা হয়েছে।
বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, একুশে পদকপ্রাপ্ত পদার্থ বিজ্ঞানী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায়ের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মরদেহ গবেষণার জন্য রাজধানীর বারডেম হাসপাতালকে দান করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার মরদেহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অজয় রায়ের ছোট ছেলে অনুজিৎ রায় বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বাবার ইচ্ছানুযায়ী মরদেহ বারডেম হাসপাতালে দান করা হয়েছে।
এর আগে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কীর্তিমান পদার্থ বিজ্ঞানী, মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক অজয় রায়ের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।
২০১৫ সালে জঙ্গিদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন অজয় রায়ের বড় ছেলে প্রবাসী লেখক অভিজিৎ রায়। এরপর, বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় আশার জায়গা ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে। দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়েই জীবনের শেষ সময়গুলোতে বার বার প্রতিবাদ করে গেছেন বরেণ্য এই পদার্থবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়।
সোমবার দুপুরে, বারডেম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ছেলে হত্যার বিচার না দেখেই পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিবারের সদস্য এবং তার সহযোদ্ধাদেরও।
অজয় রায়ের ছেলে অনুজিৎ রায় বলেন, 'বড়ভাই অভিজিৎ রায়ের হত্যার বিচার বাবা দেখে যেতে পারেননি, ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারলে তিনি কিছুটা হলেও হয়তো স্বস্তি পেতেন।'
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাকে গার্ড অব অনার দেয়ার পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার জন্য রাখা হয়। সেখানে ছুটে আসেন দীর্ঘদিনের সতীর্থরা। সবার চোখে একটাই ভাষা। এই ক্ষতি পূরণ হবার নয়।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, 'অজয় রায় সাম্প্রদায়িকতাকে ঘৃণা করতেন। তিনি, আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, 'তার মৃত্যুতে জাতির যে ক্ষতি হলো তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে।'
ধর্মনিরপেক্ষ মুক্তচিন্তার রাষ্ট্র চেয়েছেন। জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত উগ্রবাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিলো সামনের কাতারে। শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা অজয় রায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতাদেরও একজন।