ক্রিকেট

স্বস্তির জয়ে বেঁচে রইলো টাইগারদের স্বপ্ন

হ্যাপী মাহমুদ

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ২০শে অক্টোবর ২০২১ ১২:০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ওমানকে ২৬ হারালো বাংলাদেশ। স্বস্তির জয়ে সুপার টুয়েলভ স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

টি-২০ বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য পরিণত হয়েছিল ডু অর ডাই ম্যাচে। অর্থাৎ হারলেই বাদ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে হারায় এমন অবস্থায় সম্মুখীন হয়েছিল টাইগাররা। 

টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় স্কোরে চোখ ছিল মাহমুদউল্লাহদের। কিন্তু ওমানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সবকটি উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ সংগ্রহ ছিল মাত্র ১৫৩ রান। ১৫৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১২৭ রান করে তারা। জিতলেই সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত ছিল ওমানের। তবে না, সে সুযোগ তাদের দেয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতার সঙ্গে পেরে ওঠেনি ওমান।

অবাক করা সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন বোলাররা এবং সব ভয় আর আতঙ্ককে পেছনে ফেলে বাংলাদেশকে এনে দিলেন ২৬ রানের অসাধারণ এক জয়। এই জয়ে বিশ্বকাপে টিকে থাকলো বাংলাদেশ।

স্কটল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের পর দলের ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা কতটা দূর্বল হয়েছে, তা বোঝা গেছে এই ওমানের বিপক্ষে ম্যাচেই। ব্যাটিংয়ে নাইম শেখ আর সাকিব কিছুটা স্বাচ্ছন্দ ছিলেন। বাকিরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। মানসিক দৃঢ়তাই দেখা যায়নি।

ফিল্ডিংয়েও একই অবস্থা। যাচ্ছেতাই অবস্থা শুরু থেকে। প্রথম ১০ ওভারেই ওমান রান তুলে ফেলেছিল ৬৯। জয়ের লাগাম পুরোপুরি তাদের হাতে ধরা। এমন সময়ই কৃপণতা শুরু করেন শেখ মেহেদী। সঙ্গে যোগ দিলেন সাকিব আল হাসান।

মোস্তাফিজ রান দিলেও উইকেট নেয়া অব্যাহত রাখলেন। সাকিবও তার সঙ্গে জুটি বাধেন। ওমানের ১০৫ রানের মাথায় তো পরপর দুই বলে দুটি উইকেট নিয়ে নিলেন সাকিব। তাতেই ম্যাচ চলে আসে হাতের মুঠোয়।

১৫৪ রানের লক্ষ্যে ওমান ব্যাট করতে নামার পর প্রথম ওভারেই তাসকিন দিয়েছিল ৪টি অতিরিক্ত রান। পরের ওভারে মোস্তাফিজ বোলিংয়ে এসে ৫ ওয়াইডসহ দিলেন মোট ১২ রান।

সাকিব আর সাইফউদ্দিনকে দিয়ে এই ওয়াইডের বন্যা কিছুটা থামিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৬ষ্ঠ ওভারে আবারও মোস্তাফিজকে ফিরিয়ে আনেন অধিনায়ক রিয়াদ। ওভারের প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে দেন জতিন্দর সিং। বল উপরে উঠে যায়। বোলারসহ তিন-চারজন ছিলেন, যারা সেটা ধরতে পারতেন। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ এক্সট্রা কভার থেকে দৌড়ে এসে তা ধরতে গেলেন। ততক্ষণে বল পড়ে গেলো হাতের ফাঁক গলে।

এক বল পরেই ছক্কা। এরপর মোস্তাফিজের বল থেকে আর বাঁচতে পারলেন না কাস্যপ প্রজাপতি। নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি। ১৮ বলে করলেন ২১ রান।

শুরুতে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। এরপর শেখ মেহেদী এবং সাকিব আল হাসান এসে রানের চাকার কিছুটা লাগাম টেনে ধরতে পেরেছেন। যদিও একটি-দুটি আলগা বল দিয়ে মার খেয়েছেন সাকিব।

তবে ওমান অধিনায়ক জিসান মাকসুদের উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান মেহেদী। ১২তম ওভারে তার বলে ক্যাচ তুলে দেন মাকসুদ। সেই ক্যাচ ধরেন মোস্তাফিজ।

১৩তম ওভারের শেষ বলে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। বিধ্বংসী হয়ে ওঠা জতিন্দর সিংকে ফেরান সাকিব। ক্যাচ ধরেন লিটন। ৩৩ বলে ৪০ রান করেন তিনি।

এর আগে, সাকিব আল হাসান ও নাইম শেখের ৮০ রানের দুর্দান্ত জুটির ওপর ভর করে ১৫৩ রানের সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। শুরুর এবং শেষের ব্যাটিংটা ভালো হয়নি টাইগারদের। ওপেনার লিটন দাস সুবিধা করতে পারেননি। ৭ বলে ৬ রান করে যখন ফিরলেন বাংলাদেশের রান তখন ১১।

পাওয়ার প্লেতে দ্রুত রান তোলার ছক কষে স্পিনিং অলরাউন্ডার শেখ মাহেদি হাসানকে নামানো হয়েছিল তিনে। মেহেদি সফল হতে পারেননি। ৪ বল খেলে কোন রান না করেই ফিরেছেন। দুর্দান্ত খেলতে থাকা সাকিব আল ১৪তম ওভারে আলসে রান আউট হওয়ার পরই পাল্টে যায় ইনিংসের গতিপথ।

মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের আগে পাঠানো হয় নুরুল হাসান সোহান ও আফিফ হোসেন ধ্রুবকে। দুইজন উইকেটে নেমেই হিট করতে চেয়েছেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি একজনও, দুজনই সীমানায় ধরা পড়েছেন। এরপর মুশফিকুর রহিমের আউটটি ছিল একদমই দৃষ্টিকটু।

সাকিব-নাইম জুটি ভাঙার পর বাকিদের কেউই সুবিধা করতে পারেননি। এই দুইজন ছাড়া দুই অঙ্কের কোটা পেরুতে পেরেছেন কেবল অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ১০ বলে একটি করে চার ছয়ে ১৭ রান করেছেন রিয়াদ। সাকিব আল হাসান ২৯ বল খেলে ৬টি চারে ৪২ রান করেন। নাইম ৫০ বলে ৩টি চার ৪টি ছয়ে ৬৪ রান করেছেন। ৫২ রানে শেষ আট উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ওভারের শেষ বলে ১৫৩ রানে গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ওমানের হয়ে তিনটি করে উইকেট পেয়েছেন বেলাল খান ও ফায়াজ ভাট।

বাংলাদেশ একাদশ: মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, লিটন দাস, মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ নাঈম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মুশফিকুর রহিম, মোস্তাফিজুর রহমান, নুরুল হাসান, সাকিব আল হাসান ও তাসকিন আহমেদ।

ওমান একাদশ: জিশান মাকসুদ (অধিনায়ক), আকিব ইলিয়াস, আয়ান খান, বিলাল খান, ফায়াজ বাট, যতীন্দর সিং, কলিমউল্লাহ, মোহাম্মদ নাদিম, নাসিম খুশি, কাশ্যপ প্রজাপতি ও সন্দীপ গৌদ।

আরও পড়ুন